পাশাপাশি। তমলুকের রাস্তায় শুভেন্দু অধিকারী ও সৌমেন মহাপাত্র। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
ভোট বড় বালাই। কয়েক মাস আগেও যাঁরা এলাকায় পরিচিত ছিলেন পরস্পরের বিরোধী হিসেবে, মঙ্গলবার তাঁরাই পুরভোটের প্রার্থীদের নিয়ে পথে নামলেন তাঁরা।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য তমলুক পুরসভার তৃণমূল প্রার্থীদের নিয়ে মঙ্গলবার এক সঙ্গে প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি পথ হাঁটলেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ও মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দিন সকালে তমলুক শহরের সুবর্ণজয়ন্তী ভবনের সামনে পুরসভার সব ওয়ার্ডের প্রার্থী-সহ প্রায় দু’হাজার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। বেলা ১১ টা নাগাদ এসে পৌঁছান মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। এরপর শুভেন্দু অধিকারী আসতেই শুরু হয় হাঁটা। তমলুক পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডের প্রার্থী ও দলীয় কর্মীদের একাংশ জেলা প্রশাসনিক অফিসের ভিতরে যান মনোনয়নপত্র জমা দিতে।
তমলুকের সাংসদ বনাম বিধায়ক তথা জলসম্পদ মন্ত্রীর মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের জেরে তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা রাজনীতিতে কয়েক মাস আগেও এই দুই নেতার সহাবস্থান প্রায় বন্ধ ছিল। পাঁশকুড়া বনমালী কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদের জন্য একই দলের দুই নেতার অনুগামীদের তরফে আলাদা নাম প্রস্তাব হওয়ার পরে ভোটাভুটির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে শেষ পর্যন্ত ওই পদের জন্য লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেন রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। অবশেষে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
দলনেত্রীর নির্দেশে তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারীর ডাকা এক বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন বিরোধী শিবিরে থাকা অখিল গিরি, সৌমেন মহাপাত্র, শিউলি সাহা-সহ অধিকাংশ বিধায়ক। সে দিন বৈঠকের পরে শিশিরবাবু ও অখিলবাবু দু’জনেই বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন। তবে ওই সভায় হাজির ছিলেন না তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। ফলে দলের মধ্যে ঐক্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দলের অন্দরে মুকুল রায় দলনেত্রীর বিরাগভাজন হওয়ায় আর শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছে। তাই পুরভোটের আগে নিজেদের ঐক্য তুলে ধরতে চেষ্টার কসুর করেননি কেউই।
মিছিল শেষে সৌমেনবাবুকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দুবাবু বলেন, “সাংসদ হিসেবে আমি ও মন্ত্রী সৌমেনবাবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় পুরসভাকে সঙ্গে নিয়ে তমলুক শহরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে ভোটে মানুষ ফের আমাদের সমর্থন করবেন।” এরপরই সাংসদের পাশে থাকা মন্ত্রী সৌমেনবাবু বলেন, “সাংসদ যা বলেছেন আমি তার সঙ্গে একমত। তমলুক পুরসভা এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পুরভোটে আমাদের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে।” দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সামনে তমলুকের সাংসদ ও বিধায়কের এই ঐক্যের বার্তা ভোটের ফলে কতটা প্রভাব ফেলে তাই
এখন দেখার।
এ দিকে, এ দিনই এগরায় দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিল তৃণমূল ও কংগ্রেস। দুপুর ১২ টা নাগাদ প্রথমে কংগ্রেস দল প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক ক্ষিতিন্দ্রমোহন সাউ ও জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মানস কর মহাপাত্রের নেতৃত্বে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করেন। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ বেশ কয়েকশো সমর্থক ও দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে বিধায়ক সমরেশ দাস ও বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি-র নেতৃত্বে এগরা শহরে মিছিল করে তৃণমূল।