সঙ্কট খড়্গপুর-২ ব্লকে

গরম পড়তেই জলের আকাল

গরম পড়তেই অকেজো নলকূপ! এক বালতি জল দিয়েই চালাতে হচ্ছে সারাদিনের কাজ।সকালবেলাই তখন খটখট করছে রোদ্দুর। দু’হাতে দু’টি বালতি নিয়ে গজগজ করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন হালিমা বিবি। কাছের নলকূপ খারাপ।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৬
Share:

দুর্ভোগ: দূর থেকে বালতি করে জল ভরে আনতে হয়। নিজস্ব চিত্র

গরম পড়তেই অকেজো নলকূপ! এক বালতি জল দিয়েই চালাতে হচ্ছে সারাদিনের কাজ।

Advertisement

সকালবেলাই তখন খটখট করছে রোদ্দুর। দু’হাতে দু’টি বালতি নিয়ে গজগজ করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন হালিমা বিবি। কাছের নলকূপ খারাপ। তাই জল আনতে যেতে হবে দূরে মাদপুরের নলকূপে। খড়্গপুর-২ ব্লকের সদর পপড়আড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুরের বাসিন্দার হালিমা বিবি বলছিলেন, ‘‘গরম পড়তেই জলের আকাল শুরু। নলকূপ দিয়ে জল পড়ে না। দূরের নলকূপ থেকে কষ্ট করে জল বয়ে আনতে হয়। আমাদের দুর্দশা কেউ কী বুঝবে না।”

শুধু হালিমা বিবি নন, হাহাকারের এই ছবি খড়্গপুর-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই। ব্লকের কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু অংশে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে পাইপ লাইন বাহিত জলের ব্যবস্থা হয়েছে। আর ব্লকের সিংহভাগ এলাকায় পানীয় জলের জন্য এখনও ভরসা নলকূপ। গরম পড়তেই ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ায় অকেজো হয়ে পড়েছে অধিকাংশ নলকূপ। ফলে এক বালতি জলের জন্য হয়রান হতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

Advertisement

খড়্গপুর-২ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের পলশা, কালিয়ারা-১ ও চকমকরামপুরে জল সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে। যদিও বাকি বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে পানীয় জলের জন্য সারাবছর নলকূপের উপর নির্ভর করতে হয়। অধিকাংশ গ্রামে একটি বা দু’টি নলকূপ সম্বল। নলকূপের জল নিয়েও অভিযোগ বিস্তর। কোথাও নলকূপের জলে লোহার আধিক্য আবার কোথাও নলকূপ দিয়ে জল পড়ে সুতোর মতো। শীতে না তাও নলকূপ দিয়ে জল উঠত। গরম পড়তেই মিলছে না সেই জলও।

মাদপুর ব্লক অফিসের কাছেই বাড়ি কৃষ্ণরামপুরের সোনালি হেমব্রমের। তাঁর অভিযোগ, “এলাকায় পাইপলাইন বাহিত জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। গ্রামের নলকূপ দিয়ে সরু জল পড়ছে। অবিলম্বে পাইপ লাইন বাহিত জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”

মাদপুর বাজারেও একই ছবি। ২০০০ সালে এলাকার ৫৪টি মৌজায় জল সঙ্কট কাটাতে ১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এই প্রকল্পে মাগুরিয়া ও পুরুনিয়া গ্রামে দু’টি পাম্প হাউস তৈরি হয়েছে। বসেছে পাইপলাইনও। তারপরে ১৭ বছর কেটে গেলেও পাইপে জল আসেনি। এখন রাস্তায় বসানে পাইপ চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

মাদপুর বাজারের বাসিন্দা লতিকা পাল বলেন, “জলের পাইপ দেখে হতাশ লাগে। জল তো আর আসেনি। এলাকার একটি নলকূপ অধিকাংশ দিন খারাপ থাকে। জল আনতে অনেক দূরে যেতে হয়।” ব্লকের সাঁকোয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বিশ্বনাথ মাইতি বলেন, “একসময় অমশ্বরপুর গ্রামে একটি জলপ্রকল্প গড়ে তোলা হলেও এখন সেটি বন্ধ। জলসঙ্কটে নাজেহাল অবস্থা। পাইপলাইনে জল সরবরাহ করলে ভাল হয়।”

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, জলের সমস্যা মেটাতে পঞ্চায়েত সমিতি কেন উদ্যোগী হচ্ছে না? পঞ্চায়েত সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নারায়ণ মাজি বলেন, “এটা ঠিক ব্লকে জলের সমস্যা রয়েছে। আসলে এলাকায় চাষের কাজে শ্যালো পাম্প ব্যবহার হওয়ায় জলস্তর নেমে যাচ্ছে। ফলে নলকূপ দিয়ে জল উঠছে না।’’ তিনি বলছেন, ‘‘কিছু এলাকায় পাইপ লাইন বাহিত জলের ব্যবস্থা করছি। তবে অর্থের অভাবে একসঙ্গে সর্বত্র সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement