প্রতীকী চিত্র।
এক সপ্তাহ আগেই কাঁথি আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল কুখ্যাত দুষ্কৃতী কর্ণ বেরা-সহ চার জন। অভিযোগ, ছিল মেদিনীপুর জেলে বন্দি থাকার সময়ই পালানোর ছক কষেছিল সে। ঘটনায় জেল এবং আদালত চত্বরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই রেশ কাটার আগেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তমলুক জেলা উপ সংশোধানাগারে এক বন্দি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করল। যা ফের উস্কে দিয়েছে জেলে কর্মরত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
জেল সূত্রের খবর, বাবুলাল ধনী নামে ধর্ষণের মামলায় বিচারাধীন এক বন্দির গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। জেলের অন্য বন্দি ও জেল কর্মীদের নজরে আসার পরেই তাকে উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আপাতত বাবুলালের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
পুলিশ সূত্রের খবর, ময়না থানার চংরা গ্রামের বাসিন্দা বছর চৌত্রিশের বাবুলাল কলকাতায় একটি সংস্থায় কাজ করত। ওই গ্রামেরই এক মহিলা গত ২৩ জুলাই পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ করেন যে, ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাবুলাল তাঁকে হাউর এলাকায় এক বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ওই দিনই বাবুলালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পাঁশকুড়া পুলিশ গত ৩০ অগস্ট তমলুক আদালতে বাবুলালের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। গত ৯ অক্টোবর তমলুক আদালতে বাবুলালের জামিনের আবেদন নাকচ হয়। পরে সে জামিন পেতে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানায়। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করেছে বলে বাবুলালের আইনজীবীর দাবি। কিন্তু সেই খবর পৌঁছনোর আগেই ওই সন্ধ্যায় তমলুক জেলে বাবুলাল আত্মহত্যার চেষ্টা করে। খাবার আনতে যাওয়ার সময়ে জেলের ভিতরে থাকা সিঁড়ি সংলগ্ন পাইপ থেকে গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে বাবুলাল ঝুলে পড়ে অভিযোগ।
অন্য বন্দিদের নজরে আসলে তারা জেল কর্মীদের খবর দেয়। তাকে দ্রুত তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবুলালকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়।
বাবুলালের আইনজীবী রাজকুমার মাইতি বলেন, ‘‘তমলুক আদালতে জামিনের আবেদন নাকচ হওয়ার পর থেকে বাবুলাল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। তার জেরেই সে আত্মত্যার চেষ্টা করে বলে অনুমান। তবে জেলে বাবুলাল কীভাবে ওই সময়ে গামছা পেল, তা স্পষ্ট নয়। নজরদারির অভাবেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’ বাবুলালের বাবা চন্দন ধনী বলেন, ‘‘জামিনের খবরটা আরও আগে জানতে পারলে হয়তো এমনটা হত না।’’
বাবুলালের ওই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছেন জেল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন। ঘটনার জেরে জেলের মধ্যে নিরাপত্তা ও নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা আদালতের আইনজীবীরা। জেলের সুপার তথা তমলুকের মহকুমাশাসক কৌশিকব্রত দে বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় বন্দিরা খাবার আনতে যাওয়ার সময় ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ওই বন্দিকে উদ্ধার করা হয়। সে এখন বিপদমুক্ত রয়েছে। জেলে নজরদারির কোনও সমস্যা নেই।’’