দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সুব্রতবাবু। নিজস্ব চিত্র।
ভোটের আগে কোন্দল ঠেকাতে কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী।
বৃহস্পতিবার প্রথমে ঘাটাল শহরের টাউন হলে কর্মিসভা করেন সুব্রতবাবু। তারপরে ক্ষীরপাই টাউন হলে দলের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। ঘাটালের কর্মিসভায় সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘বিরোধী দলগুলির কোনও অস্তিত্ব নেই। তৃণমূলই এই মুহূতের্ সবচেয়ে বড় দল।’’ তবে দলের কর্মিদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘দলের দেওয়া দায়িত্ব পালনই যে কোনও কর্মীর প্রধান দায়িত্ব। দলের কোনও পদের জন্য বা ভোটে লড়ার ছাড়পত্র না পেলে অভিমান করা ঠিক নয়।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু ঘাটাল নয়, সর্বত্রই পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে কম-বেশি বেগ পেতে হয়েছে দলীয় নেতৃত্বকে। ঘাটালে বিভিন্ন সময়ে বেআব্রু হয়েছে দলীয় কোন্দল। কখনও কেউ নিজের অনুগামীদের নিয়ে মিছিল করে ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছেন। আবার কেউ দলের প্রার্থীপদ না পেয়ে নির্দল হিসেবে ভোটে লড়ছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে দলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি অজিত দে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে একটি মিছিল বের করেন। ফলে প্রার্থী তালিকা তৈরির আগে বিভিন্ন পুরসভার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠকে বসেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, শঙ্কর দোলই, প্রদ্যোৎ ঘোষ-সহ দলীয় নেতৃত্ব।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরেও বন্ধ হয়নি কোন্দল। ভোটে লড়ার ছাড়পত্র না পেয়ে অনেকে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পরে অবশ্য দু’এক জন বাদে বাকিরা সকলেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক জেলা নেতার কথায়, “দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতেই দলের রাজ্য সভাপতির ওই বার্তা। যাতে দলে থেকে আর কেউ অশান্তি করার সাহস দেখাতে না পারেন।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভোটের আগে দলের বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশে এক প্রকার কড়া বার্তাই দিয়ে রাখলেন সুব্রতবাবু।
এ দিন ঘাটালের কর্মিসভায় ঘাটাল ও খড়ার পুরসভার দলীয় কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অন্য দিকে, ক্ষীরপাইয়ের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুর ও ক্ষীরপাই পুর এলাকার দলের কর্মীরা। দু’টি সভাতেই উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী জ্যোতির্ময় কর, জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, পরিষদীয় সচিব শঙ্কর দোলই, বিধায়ক মৃগেন মাইতি, শ্রীকান্ত মাহাতো, মমতা ভুঁইয়া, শ্যাম পাত্র-সহ দলের ব্লক নেতৃত্ব।
ঘাটালের কর্মিসভায় মিনিট পনেরো বক্তব্য রাখেন সুব্রতবাবু। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘বিরোধীদের যে কয়েকটি পোস্টার, ফেস্টুন রয়েছে, ভোটের পর সেগুলি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা, এখানে (রাজ্যে) বিরোধী দল থাকলেও আছে শুধু তাদের পতাকাই, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই।’’
তবে কর্মীদের উদ্দেশে সুব্রতবাবুর পরামর্শ, “বিরোধী দল নেই বলে আত্মসন্তুষ্টিতে থাকলে হবে না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সব সময় সংযোগ রেখে চলতে হবে। ভোটের দিন মানুষ যাতে তাদের সুচিন্তিত মতামত জানাতে পারে, তার ব্যবস্থাও করতে হবে।’’ একইসঙ্গে, তাঁর সংযোজন, ‘কোনও পেশি শক্তি নয়, ‘আমাদের দেখতে হবে কত মানুষের সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে।’’ এ দিন খড়্গপুরেও কর্মিসভা করেন সু্ব্রতবাবু।