গরমের মধ্যে বারান্দাতেই পরীক্ষা দিচ্ছে প্রাথমিকের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
একই ক্যাম্পাসে চলা হাইস্কুল এবং প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিবাদ। তার জেরে তালাবন্ধ থাকল শ্রেণিকক্ষ। অগত্যা গরমের মধ্যে স্কুলের বারান্দায় বসে পরীক্ষা দিল প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা! ঘটনা মেদিনীপুর শহরের মোহনানন্দ হাইস্কুলের। অভিযোগ, হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুল ঘরের তালা না খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঘটনার জেরে শুক্রবার সকালে স্কুলে উত্তেজনা ছড়ায়। বিক্ষোভ দেখান ওই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের একাংশ।
একাংশ অভিভাবক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুমিতকুমার ঘোষকে ‘নিগ্রহ’ করেন বলেও অভিযোগ। সুমিত বলেন, ‘‘ক্যাম্পাসের মধ্যে নিগ্রহ করেছে আমাকে। ধাক্কাধাক্কি করেছে। সভাপতিকেও করেছে।’’ পরিচালন সমিতির সভাপতি অজয়রঞ্জন সাহু বলেন, ‘‘আমাকেও ঠেলাঠেলি করেছে।’’ প্রাথমিক স্কুলে এ দিন অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের পরীক্ষা ছিল। স্কুলের বারান্দায় বসে পরীক্ষা দিয়েছে দেড় শতাধিক পড়ুয়া। প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অদিতি কর্মকার বলেন, ‘‘স্কুলের সব ঘরে তালা লাগানো ছিল। বাধ্য হয়ে ছাত্রছাত্রীদের বারান্দায় বসিয়ে পরীক্ষা নিতে হয়েছে।’’ প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘কেয়ারটেকার রয়েছেন। তাঁর কাছেই চাবি থাকে। হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ দিন ওঁকে ঘরের তালা না খোলার কথা বলেছিলেন।’’ ঘটনা নিয়ে জেলা শিক্ষা দফতরের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে জেলা প্রশাসন।
জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই হাইস্কুল এবং প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিবাদ চলছে এখানে। এ দিনের ঘটনা নিয়ে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাকে নিগ্রহ করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’’ তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুল এখানে চলছিল, চলেই। প্রাথমিক স্কুলের সঙ্গে হাইস্কুলের একটা সমস্যা হচ্ছে। টাকা-পয়সা নিয়ে। বিদ্যুতের বিল-সহ যে ন্যূনতম খরচ, সেটা ওরা দু’বছর ধরে দেয়নি।’’ ঘরের তালা খোলা হল না কেন? প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আজ থেকে আমাদের স্কুলেও পরীক্ষা ছিল। ১৯টি ঘরের সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষার জন্য। সে জন্যই বলেছি ঘরগুলি বন্ধ থাকবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওদের (প্রাথমিকের) যে পরীক্ষা চলছে কিংবা পরীক্ষা রয়েছে, সে ব্যাপারে হাইস্কুলকে কিছু জানায়নি। প্রাথমিক স্কুলের উচিত ছিল ওদের পরীক্ষার বিষয়টি আমাদের জানানো। জানালে এই সমস্যা হত না।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি আমরা মর্নিং স্কুল চালু করে দিতাম, তা হলে ওরা কোথায় পরীক্ষা নিত?’’ পরিচালন সমিতির সভাপতিও বলেন, ‘‘এখানে একটা প্রাইভেট স্কুল চালু করে রেখেছে। ওরা দু’হাজার টাকা করে ভাড়া দিত। আড়াই বছর ধরে কোনও পয়সা আর দেয়নি। পরীক্ষা ছিল, সেটা ওরা আমাদের জানায়নি।’’
প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পরীক্ষার বিষয়টি জানতেন হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ভাবে ঘরগুলি তালাবন্ধ করে রাখার নির্দেশ কেন দেওয়া হয়েছিল, প্রশ্ন তাঁদের। এ দিনের ঘটনার ব্যাপারে খোঁজখবর করতে গিয়ে জেলা প্রশাসন জানতে পারছে, ওই হাইস্কুলে আরও একাধিক অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে। সেগুলির ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। একাংশ অভিভাবকের বিক্ষোভের জেরে এক সময়ে শোরগোল পড়ে স্কুল ক্যাম্পাসে। খবর পেয়ে স্কুলে যান স্থানীয় কাউন্সিলর মোজাম্মেল হোসেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রধান শিক্ষকের অনুযোগ, ‘‘এ দিনের বিক্ষোভ তৈরি করা হয়েছে। আমার বাড়িতে গিয়েও হামলা করা হয়েছে।’’ একাংশ অভিভাবকের মতে, দুই স্কুলের হাজারো ঝামেলা থাকতে পারে। কিন্তু এই গরমে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের যে ভাবে বারান্দায় বসে পরীক্ষা দিতে হল, সেটা অনভিপ্রেত। এ দিনের গোলমালের ঘটনা নিয়ে হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে প্রধান শিক্ষককে ‘নিগ্রহে’র ঘটনায় জড়িত তিন অভিভাবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।