স্কুলের গেটে দেওয়া সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
‘কন্যাশ্রীর টাকা ফেরত চাই’, ‘সবুজ সাথী প্রকল্পের ফর্ম-এর টাকা ফেরত চাই’। ‘হেড স্যারের পদত্যাগ চাই’। লাল-সাদা কাগজের উপরে লেখা এমন পোস্টারেই ঢেকে গিয়েছিল স্কুলের গেট।
তবে এমন অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েই ক্ষান্ত হয়নি পড়ুয়ারা। টাকা ফেরতের দাবিতে সকাল থেকে স্কুলের গেটে তালাও লাগিয়ে দেয় তারা। মঙ্গলবার সুতাহাটার চৈতন্যপুর শিমুলবেড়িয়া যোগেন্দ্র বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মৌমিতা বর্মনের অভিযোগ, কন্যাশ্রী প্রকল্পের ফর্ম পূরণের তাঁর কাছ থেকে ৩১ টাকা নেওয়া হয়েছে। একই অভিযোগ ওই স্কুলেরই দশম শ্রেণীর আর এক ছাত্রের। তার অভিযোগ, সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল পাওয়ার আগে যে ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে তার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ টাকা নিয়েছেন। শুধু এই দু’জনই নয়, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের স্কলারশিপের ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রেও স্কুলের পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হত বলে অভিযোগ। স্কুলের এক করণিক মিল্টন মণ্ডল এ ধরনের ‘কাটমানি’ পড়ুয়াদের কাছ থেকে নিতেন বলে অভিযোগ।
ছাত্রছাত্রীদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে তারা একাধিকবার প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ জানায়। তা সত্ত্বেও অভিযুক্ত ওই করণিকের করণিকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি প্রধান শিক্ষক। উল্টে অভিযোগকারী পড়ুয়াদের স্কুল থেকে ‘বহিষ্কারের’ হুমকি দেওয়া হত বলে বেশ কিছু পড়ুয়ার অভিযোগ। এদিন সকাল থেকে স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে রাখায় শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীদের কেউই স্কুলে ঢুকতে পারেনি। পড়ুয়াদের দাবি, ২০১২সাল থেকে তাদের কাছ থেকে এভাবে নানা কারণে কাটমানি নেওয়া হত। কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংক্রান্ত খরচের জন্য বলে প্রধান শিক্ষক সাফাই দিতেন। এমনকি বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার প্রধান শিক্ষক এবং ওই করণিকের সঙ্গে অভিভাবক ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু তারপরেও পড়ুয়াদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ।
সরকার পোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের কাছ থেকে এ ভাবে টাকা নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, প্রশ্ন উঠেছে।
স্কুলের শিক্ষিকা চৈতালি মল্লিকের দাবি, কোনওভাবেই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া উচিত নয়। ঘটনা জানার পর প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। টাকা ফেরতের দাবিতে এমন বিক্ষোভে কার্যত স্কুল সম্পর্কে অনেকেরই খারাপ ধারণা হল।
পড়ুয়াদের কাছ থেকে এ ভাবে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সমর সিংহর যুক্তি, ‘‘এটা স্কুলের কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং তার মেরামতির খরচের জন্য নেওয়া হচ্ছিল। তবে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’