পটাশপুরে আবেদনপত্র জমা নেওয়া চলছে। নিজস্ব চিত্র
বন্ধ গ্রিলের দরজার উল্টোদিকে টেবিলে রাখা ব্যালেট বক্সের মতো দেখতে বাক্স। সেই বাক্সে ‘পাহারারত’ সিভিক ভলান্টিয়ারদের সমানে আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন গ্রামবাসী।
বৃহস্পতিবার থেকে দু’দিনের জন্য নতুন করে শুরু হয়েছে আমপানে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া। এ দিন নিম্নচাপের বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মহকুমাশাসকের অফিস এবং ব্লক অফিসগুলিতে সেই আবেদন জমা দিতে ভিড় করেছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। পটাশপুর-১ ব্লক অফিসের সামনে ব্যালট বক্সের লেবেল লাগানো বাক্সে আবেদনপত্র জমা দিতে দেখা গিয়েছে। ভিড় এড়াতে গেটের বাইরে থেকেই পঞ্চায়েতগুলির নাম লেখা বাক্সগুলিতে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের।
রাজ্যের সরকারের নির্দেশ মতো জেলার সমস্ত ব্লক অফিসে গ্রামীণ এলাকার এবং মহকুমাশাসকের অফিসে পুরসভার এলাকার বাসিন্দাদের আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তেরা পাবেন ২০ হাজার এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তেরা পাবেন পাঁচ হাজার করে টাকা। এ দিন ব্লক অফিসগুলিতে কড়া করোনা সতর্কবিধি মানা হলেও আবেদনের নথি জেরক্স করতে আশেপাশের দোকানগুলিতে ভিড় হয়েছে বলে অভিযোগ।
নন্দকুমারের কুমরআড়া পঞ্চায়েতের ধিতাইবসান গ্রামের বাসিন্দা স্বপন পাঁজা এ দিন আবেদন জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ঝড়ে গাছ ভেঙে বাড়ির টালির ক্ষতি হয়েছিল। সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য সে সময় আবেদন পত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ তদন্ত করতে আসেননি। টাকাও পাইনি। তাই এ দিন আবার আবেদন করলাম।’’
প্রথমদিনেই ভাল সংখ্যায় আবেদন জমা পড়েছে বলে বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। শহিদ মাতঙ্গিনীর বিডিও সুমন মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রথম দিয়েই এক হাজারের বেশি ফর্ম জমা পড়েছে। এই সখ্যা আরও বাড়বে।’’ পাঁশকুড়া ব্লকে এ দিন আবেদন জমা পড়েছে ৩১০টি ও কোলাঘাট ব্লকে জমা পড়েছে ২৪১টি।
গত মে মাসে আমপানের পরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে এতটাই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল যে, কোনও কোনও পঞ্চায়েতে নতুন করে তালিকা তৈরি করতে হয়েছে। সেই তালিকারও এখনও অনেকে টাকা পাননি বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪৮ হাজার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং এক লক্ষ ৪০ হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নতুন আবেদন জমা এবং দ্রুত টাকা দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকার এখন যে সিদ্ধান্ত নিয়ে, তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েকের কটাক্ষ. ‘‘গত ২০ মে আমপানের পর আড়াই মাস কেটে গিয়েছে। এখনও ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকে সরকারি সাহায্য দিতে পারল না রাজ্য সরকার। আর এখন লকডাউনের মাঝে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে বঞ্চিতদের সকলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এটা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।’’