মমতার সঙ্গে প্রদীপ। ফাইল চিত্র
দিনভর নাটক শেষে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। কিন্তু এ বার পুরপ্রধানের দায়িত্বভার সামলাবেন? কে-ই বা হচ্ছেন পরবর্তী পুরপ্রধান? প্রদীপ কি অন্য কোনও পদে পুনর্বাসিত হচ্ছেন? এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রেলশহরে৷
বুধবার রাত পর্যন্ত পরবর্তী পুরপ্রধানের নাম জানাতে পারেনি তৃণমূল। পুর-আইন অনুযায়ী, পুরপ্রধানের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব সামলান উপ-পুরপ্রধান। এ ক্ষেত্রে সেই নিয়মেই খড়্গপুরের উপ-পুরপ্রধান তৈমুর আলি খান আপাতত দায়িত্ব সামলাবেন কি না তাও ঠিক হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে এই সংক্রান্ত নির্দেশ আসবে।
পুরপ্রধানের পদত্যাগপত্র যে পদ্ধতিতে গৃহীত হয়েছে, তা পুর-আইন স্বীকৃত কি না সেই ধোঁয়াশাও থেকে গিয়েছে। ফলে আপাতত পুরপ্রধান কে, তা নিয়ে পুরকর্মীরাও বিপাকে পড়েছেন। এতে পুরসভায় অচলাবস্থা বজায় থাকবে বলেই আশঙ্কার। পরবর্তী পুরপ্রধান হিসাবে কার নাম সামনে আনা হবে সে দিকেও তাকিয়ে রেলশহর।
উপ-পুরপ্রধান তৈমুর আলি খান বলেন, “নিয়ম রয়েছে পুরপ্রধানের অবর্তমানে উপ-পুরপ্রধান দায়িত্ব নেবে। তবে আমার কাছে সেই দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে এখনও চিঠি দেওয়া হয়নি। আর পরে পুরপ্রধান কে হবে সেটা দল ঠিক করবে।” তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতিও বলেন, “আপাতত উপপুরপ্রধান দায়িত্ব সামলাবেন। দলকে কাউন্সিলরদের তালিকা পাঠিয়ে দেব। দল পুরপ্রধান ঠিক করবে।”
অবশ্য তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে দলের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি নাম পুরপ্রধান পদপ্রার্থী হিসাবে ভাসছে। প্রাথমিকভাবে ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলরদের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে চিঠিতে সই করানোর কাজে সামনের সারিতে ছিলেন একসময়ে প্রদীপ ‘ঘনিষ্ঠ’ ৯নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ। পরে কোলাঘাটে বিদ্রোহী কাউন্সিলররা এক বৈঠকে ঠিক করেন প্রবীরই হবেন পুরপ্রধান। প্রবীর বলেন, “আমাকে দায়িত্ব দিলে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।” তবে প্রবীরের বিরুদ্ধে থানায় মহিলা তৃণমূলকর্মীকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে, পাশাপাশি উঠে এসেছে মাস সাতেক আগে পুরপ্রধানের দৌড়ে এগিয়ে থাকা পুরনো কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষ ও অপূর্ব ঘোষের নাম। কল্যাণী বলেন, “দায়িত্ব পেলে নিশ্চয় সকলকে নিয়ে কাজ করব।” প্রদীপকে হটানোর প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে। তৃণমূলের রাজ্যস্তরের এক নেতার সঙ্গে নিয়মিত কথাও হচ্ছে রবিশঙ্করের। সেক্ষেত্রে পুরবোর্ডে রবিশঙ্করের অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে তাঁর স্ত্রী কাউন্সিলর রীতা পাণ্ডে পুরপ্রধান হতে পারেন বলেও জল্পনা। অন্যদিকে তৃণমূলের একাংশ বলছে, ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছে পুলিশের একাংশ। সেক্ষেত্রে শহরের তেলুগু সম্প্রদায় থেকেও কাউকে পুরপ্রধান করা হতে পারে। সেই দৌড়ে সামনে আসছে ২১নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডি বাসন্তীর নাম। আবার বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় দল বদলে তৃণমূলে আসে পুরপ্রধান হবেন, এমনটাও ভাসছে রেলশহরের বাতাসে।
জল্পনায় প্রদীপের ভবিষ্যৎও। কাউন্সিলর তিনি থাকবেন ৷ দল তাঁকে অন্য বড় পদ দেবে, তাই পদত্যাগ করতে বলেছে বলে দাবি করেছিলেন তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর। যদিও প্রদীপের পদত্যাগপত্র জমা নিয়ে যে নাটকীয়তা ও মিছিল করে যাওয়া দল ভাল চোখে নেয়নি বলে এক জেলা নেতা জানান৷ অজিতও এখন বলছেন, “প্রদীপকে দলীয় কোনও পদ দেওয়ার ব্যপারে দলই সিদ্ধান্ত নেবে।”