(বাঁ দিকে) অখিল গিরি। (ডান দিকে) উত্তম বারিক। —ফাইল চিত্র।
দলের অন্দরে তাঁদের দ্বন্দ্ব নিয়ে আর কার্যত কোনও রাখঢাক নেই। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ এবং তিক্ততা প্রকাশ্যে এসে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। জেলার বিবাদমান সেই দুই তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি এবং উত্তম বারিক একই দিনে কলকাতায় গিয়েছেন। এর কারণ স্পষ্ট না হলেও তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে জেলা রাজনীতিতে।
গত মঙ্গলবার রামনগরের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী অখিল গিরি এবং পটাশপুরের বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক কলকাতায় যান। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁদের গন্তব্য ছিল আলাদা। উত্তম গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে। অখিল সেখানে না গেলেও ঠিক কোথায় ছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও, তিনি তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে দেখা করেন বলে দলের একাংশ সূত্রের খবর। উত্তম ও অখিল কেউই কলকাতা-যাত্রা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে মঙ্গলবার নিজের নির্বাচনী এলাকায় একটি রাস্তার উদ্বোধনে গিয়ে অখিল দাবি করেন, দলের নেতৃত্ব ডেকে পাঠিয়েছেন। বলেই তাঁকে কলকাতা যেতে হচ্ছে। কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরি বলেন,"মঙ্গলবার বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে ডাক ছিল বাবার। তাই কলকাতা গিয়েছিলেন।’’
পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের অন্দরে ক্ষমতার পরিবর্তিত সমীকরণে এখন কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছেন অখিল। তাঁকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত অভিষেকের শিবিরের নেতা হিসাবে পরিচিত উত্তম বারিকের সেই তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। নিজেকে খানিকটা গুটিয়েও রেখেছেন তিনি। আগামী মাসে জেলায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে অখিল বসতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
আগামী ৩১ জানুয়ারি কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির ১৫ জন সদস্যকে শংসাপত্র দেবেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তারপর চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন হওয়ার কথা। তৃণমূল সূত্রের খবর, নিজেদের ঘনিষ্ঠদের চেয়ারম্যান পদে বসাতে চেয়েই অখিল এবং উত্তম শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে দরবার করতে কলকাতা ছুটেছেন। উল্লেখ্য, কলকাতা যাওয়ার আগে অখিল এবং উত্তম দু’জনই হাজির ছিলেন নিমতৌড়িতে জেলা শাসকের অফিসে।
সূত্রের খবর, আগামী বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে অখিল এবং উত্তমকে একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ করা হয়। তাতে অখিল জেলাশাসকের কাছে নালিশ করেন, জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে তাঁকে কিছু জানানো হয় না। পাল্টা, উত্তম জানান, কাজের ব্যাপারে জেলা পরিষদের সদস্যরা অবগত। এ ক্ষেত্রে বিধায়কে সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। তাতে দৃশ্যত চটে যান অখিল। বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এমনকি, সভাধিপতির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রকাশ্যে তিনি মন্তব্য করেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
গোটা ঘটনাকে কটাক্ষ করে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, "এখন দরদাম চলছে। কে, জেলা থেকে কত বেশি টাকা তুলে পাঠাতে পারবেন, তার অঙ্ক কষছেন পিসি আর ভাইপো।"