প্রতীকী ছবি।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল দুঃস্থ ও দরিদ্র মানুষদের পাঁচ টাকায় ভরপেট ডিম ভাত খাওয়ানো। আর্থিক অনটনে এতকাল ‘মা’ প্রকল্প শুরু করতে পারেনি এগরা পুরসভা। তবে এ বার শুরুতেই এই প্রকল্পের খাবারের জন্য টোকেন নির্দিষ্ট করায় বিতর্কের মুখে পড়েছে এগরা পুরসভা। পুরসভার টোকেন না থাকায় শহরে আসা দরিদ্র ও দুঃস্থরা চাইলেও খেতে পারবে না পাঁচ টাকার ডিম ভাত। যদিও পুরসভার যুক্তি, তৈরি খাবার যাতে নষ্ট না হয় সেই কারণেই এই টোকেন প্রথা চালু করা হয়েছে।
বিধানসভা ভোটের মুখে রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কলকাতায় ‘মা’ প্রকল্পের সূচনা হয়। পরবর্তীতে জেলার প্রতিটি পুরসভায় এই প্রকল্প শুরুর কথা ছিল। সরকারের উদ্দেশ্য, দরিদ্র ও দুঃস্থ সাধারণ মানুষ, পথচারীদের পাঁচ টাকায় ভরপেট ডিম ও ভাত খাওয়ানো। প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার পুরসভাগুলিকে আর্থিক সহায়তা দেয়। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রথম তমলুক পুরসভায় ভোটের আগে মা প্রকল্প শুরু হয়। অর্থ বরাদ্দ না হওয়ার কারণে এগরা পুরসভা এতদিন মা ক্যান্টিন চালু করতে পারেনি। গত ১৬ অগাস্ট, এগরা পুরসভায় ‘মা’ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। তবে মা ক্যান্টিনে কারা কারা পাবেন সেই তালিকা তৈরি করেছে পুর কর্তৃপক্ষ। আর তা নিয়েই গোল বেধেছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, পুরসভার চোদ্দোটি ওয়ার্ডের দুঃস্থ ও দরিদ্রদের চিহ্নিত করে মোট চল্লিশ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই সকল ব্যক্তিদেরই পুরসভার টোকেন দেওয়া হয়েছে। টোকেন প্রাপকেরাই শুধুমাত্র পাঁচ টাকার ডিম ভাত খেতে পারবেন। যদিও সরকারি এই প্রকল্পে খাবার বিলির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও এলাকা বা লোকজনের তালিকা তৈরির বিধান নেই। যে কোনও দুঃস্থ এই খাবার পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে টোকেন না পাওয়ার কারণে শহরের উদ্বাস্তু পরিবারের সদস্যরা কিংবা শহরে কাজের জন্য আসা দুঃস্থ ও দরিদ্র মানুষ চাইলেও পাঁচ টাকার ডিম ভাত খেতে পাবেন না। এগরা পুরসভার এই বাঁধাধরা নিয়ম নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পুরসভার ক্যান্টিনে এই প্রকল্পের জন্য একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই ক্যান্টিনের খাবার তৈরি ও পরিবেশন করেন। প্রতিদিন পঁয়তাল্লিশ জনের খাবার তৈরি হয়। টোকেন প্রাপক চল্লিশ জন বাদে অতিরিক্ত পাঁচটি মিল নেওয়া থাকে।
টোকেন ব্যবস্থা নিয়ে পুরসভার দাবি, প্রতিদিন কত পরিমাণ খাবার রান্না হবে তা নির্দিষ্ট করতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে অতিরিক্ত কিছু খাবার রাখা হয়। অন্যথায় হিসাব বহির্ভূত খাবার তৈরির পরে মানুষ খেতে না এলে খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদিও বিরোধীদের দাবী, সামনে পুরসভার ভোট। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তৃণমূল এই প্রকল্প চালু করেছে। দরিদ্র মানুষের কথা না ভেবে দলীয় স্বার্থে বাছাই করা কিছুজনকে খাবারের টোকেন দেওয়া হচ্ছে।কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরভোটের আগে মানুষকে নতুন করে ভাঁওতা দিচ্ছে এগরা পুরসভা। ভোটের স্বার্থে পুরসভা দরিদ্রের তালিকা তৈরি করে টোকেনে খাবার দিচ্ছে। অথচ এগরায় শয়ে শয়ে মানুষ প্রতিদিন আধ পেট খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আসলে তৃণমূলের কাজই মানুষকে ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করা।’’
এগরা পুরসভার ‘মা’ ক্যান্টিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘পুরসভার নিদির্ষ্ট তালিকাভুক্ত মানুষের জন্য এখানে খাবার বরাদ্দ থাকে। চাইলে যে কেউ এখানে খাবার পাবেন না। তবে প্রতিদিন কয়েকটা বাড়তি মিল থাকে। অসহায় কেউ ওই সময়ে এলে তাঁকে খাবার দেওয়া হয়।’’
এগরার পুরপ্রশাসক স্বপন নায়কের দাবি, ‘‘শুরুতে ক্যান্টিনে ডিম-ভাত খাওয়ার জন্য সেভাবে লোকে আসেনি। তাই প্রাথমিক ভাবে ওয়ার্ড ভিত্তিক দুঃস্থ ও দরিদ্রদের বেছে টোকেন দেওয়া হয়েছে। বেশি রান্না করার পরে কম সংখ্যক মানুষ এলে খাবার নষ্টের আশঙ্কা থাকে। তবে আগামী দিনে যে কেউ চাইলে মা ক্যান্টিনের খাবার খেতে পারবেন।’’