মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময়ে হেলিপ্যাডে দুর্গেশ মল্লদেব ও বিক্রমাদিত্য মল্লদেব। নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে অভিমান। বছর ঘোরার আগেই মানভঞ্জন। বিধানসভা ভোটের আগে বাড়তি গুরুত্ব।
তিনি বিক্রমাদিত্য মল্লদেব। ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের একুশতম পুরুষ। তৃণমূল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম থেকে কপ্টারে ফেরার আগে বিক্রমাদিত্যকে পুর এলাকার সমস্যা দেখতে বলেছেন। এরপরই শাসক দলের অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে কি অরণ্যশহরের পরবর্তী পুরপ্রধান হিসেবে বিক্রমাদিত্যকেই সামনে আনতে চাইছেন নেত্রী! বাবা দুর্গেশ মল্লদেবের পর ছেলের হাতেই থাকবে শহর শাসনের ভার!
‘রাজ্যাভিষেকে’র অবশ্য এখনই সম্ভাবনা নেই। কারণ, আপাতত মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ঝাড়গ্রাম পুরবোর্ড চালাচ্ছে পুরপ্রশাসকমণ্ডলী (দুর্গেশ অন্যতম সদস্য)। পুরভোট কবে হবে তা-ও অনিশ্চিত। তাই তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘নেত্রী বলেছেন বটে। তবে আমাদের দলে এত আগে থেকে কিছু হয় না। কেউ কিছু আগে ভাগে ভেবে নিলে ভুল করবে।’’
বিক্রমাদিত্যের পথ অবশ্য মসৃণ নয়। এ ক্ষেত্রে কাঁটা হতে পারে অতীত। কারণ, গত বছর মে মাসের গোড়ায় লোকসভা ভোটের আগে ঝাড়গ্রামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জনসভায় দর্শক আসনে বসে মোদীর বক্তৃতা শুনেছিলেন বিক্রম। গত বছর সেপ্টেম্বরে দিলীপ ঘোষের হাত থেকে গেরুয়া পতাকা নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এরপর গত বছর কয়েকদিন বিক্রমকে রাজবাড়িতে ঢুকতে দেননি দুর্গেশ। বিজেপি-র জেলা কার্যালয়ের অতিথিশালায় আশ্রয় নিতে হয় বিক্রমকে। পরে অবশ্য রাজবাড়িতে ফেরেন তিনি। তারপর বহুদিন রাজনৈতিক সক্রিয়তা দেখা যায়নি বিক্রমের। সূত্রের খবর, চলতি বছরে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তৃণমূলে ফিরেছেন বিক্রম। কয়েকদিন আগে হাথরসের ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রতিবাদে শহরে তৃণমূলের ধিক্কার মিছিলে দুর্গেশের পাশে হাঁটতে দেখা যায় বিক্রমকে। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছিলেন, অসুস্থ দুর্গেশকে সামলানোর জন্য ওই মিছিলে বিক্রম ছিলেন। পরে অবশ্য বিক্রম জানিয়ে দেন, তিনি আর বিজেপিতে নেই।
শহরের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতেরা জানেন, রাজপরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কে বরাবরই চড়াই-উতরাই আছে। দুর্গেশ প্রাক্তন পুরপ্রধানের পাশাপাশি জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতিও বটে। তবে রাজবাড়ির বাইরে পর্যটন উন্নয়ন নিগম পরিচালিত রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সটির (কমপ্লেক্স তৈরি রাজপরিবারের জমিতে) লভ্যাংশ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে রাজ পরিবারে। দুর্গেশের ঠাকুর্দা ঝাড়গ্রামের শেষ রাজা নরসিংহ মল্লদেবের ( বলা হয় নরসিংহই ‘আধুনিক ঝাড়গ্রামের রূপকার’) মূর্তি বসানো নিয়েও মনোমালিন্য রয়েছে। তবে বিরোধ-বিসম্বাদ যাই থাকুক না কেন, দুর্গেশের আনুগত্য নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। চাকরি ছেড়ে পর্যটন ব্যবসায় মন দেওয়া বিক্রমের হাত ধরেই ২০১৮ এর অক্টোবরে রাজবাড়ির রিসোর্টটি ‘অতুল্য ভারতে’র (কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প) সঙ্গে জুড়েছে। যার সাত মাস পরেই মোদী সভায় বিক্রমাদিত্যের আর্বিভাব।
তবে গেরুয়া সঙ্গ এখন অতীত। বিক্রমাদিত্য এখন বলছেন, ‘‘দিদি (মমতা) আমাকে বলেছেন, বাবার সঙ্গে কাজ করতে। শহরে গরিব মানুষের পাট্টা পাওয়ার বিষয়টিও বাবার সঙ্গে আমাকেও মুখ্যমন্ত্রী দেখতে বলেছেন।’’ হাল ছাড়তে নারাজ বিজেপিও। জেলা বিজেপি সভাপতি সুখময় শতপথীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘চাপে পড়ে এ রকম বলছেন বিক্রমাদিত্য।’’
বেতাল থাকবে না। সে উড়ে যাবেই। সব জেনেও বেতালকে পিঠে বয়ে বেড়াতেন রাজা বিক্রমাদিত্য। নাছোড় বিজেপিকে নিয়ে কি করবেন রাজপরিবারের একুশতম পুরুষ!