প্রতীকী ছবি।
টিম পিকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হিসেবে নাম প্রস্তাব করেছে এক প্রাক্তন মাওবাদীর। তাতেই শোরগোল লালগড়ে। আপত্তি আসছে তৃণমূলের ভিতর থেকেই।
শ্যামল মাহাতোকে সরিয়েই নাকি ওই প্রাক্তন মাওবাদীকে পরবর্তী ঝাড়গ্রামের লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জেলবন্দি তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতোর ঘনিষ্ঠ ওই নেতাকে ব্লক সভাপতি করলে বহু মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করা হবে বলে মত তৃণমূলের একাংশের। জানা গিয়েছে, যাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তিনি বাম আমলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়ে মাইন হামলায় অভিযুক্ত। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর জিন্দলদের কারখানার শিলান্যাস করে ফেরার পথে শালবনির ভাদুতলার কাছে ওই বিস্ফোরণে অল্পের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি রক্ষা পায়। ওই প্রাক্তন মাওবাদী এখন লালগড় ব্লক তৃণমূলের আদিবাসী সেলের দায়িত্বে রয়েছেন। জনসাধারণের কমিটির আন্দোলন পর্বে কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন তিনি। রাষ্ট্রদ্রোহ, খুন ও নাশকতার একাধিক মামলাতেও অভিযুক্ত। ঝাড়গ্রামের জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা বলেন, ‘‘ব্লক সভাপতি বদল হলে সেটা শীর্ষ স্তর থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। পিকে টিম কী করছে আমাদের জানা নেই।’’
জেলায় ৮টি ব্লক। তৃণমূল সূত্রের খবর, একাধিক ব্লক সভাপতিকে সরানো হতে পারে। বিধানসভা ভোটে যাঁরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেননি তেমন ব্লক সভাপতিদের পদ হারানোর সম্ভাবনা প্রবল। আবার আগামী পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করে আদিবাসী এলাকায় আদিবাসী নেতাদের মধ্যে থেকে ব্লক সভাপতি বাছার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে নতুন মুখ খুঁজে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তালিকা জমা দিয়েছে টিম পিকে। লালগড়ে শ্যামলকে সরিয়ে আদিবাসী কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার ভাবনাচিন্তা চলছে।
শ্যামলও একটা সময় ছত্রধরের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। বাম আমলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার হন। ২০১১ সালে শাসকদলে যোগ দিয়ে প্রথমে লালগড় অঞ্চল যুব সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরে লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব পান শ্যামল। লালগড় ব্লকটি ঝাড়গ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত। এবার বিধানসভা ভোটের ফলাফলে ব্লকের ১৭০ টি বুথের মধ্যে ১৫২টি বুথে তৃণমূলের লিড রয়েছে। ভোটে শ্যামলের ভূমিকা আশাজনক বলেই তৃণমূল সূত্রের দাবি। তবে রাজনীতির ক্ষমতার দড়ি টানাটানি ও উন্নয়নের ভাগাভাগি নিয়ে ব্লক সভাপতি শ্যামলের সঙ্গে ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তির সম্পর্ক ইদানিং বেশ ‘শীতল’।
নিয়তিই ব্লক সভাপতি হিসেবে ওই প্রাক্তন মাওবাদীর নাম প্রস্তাব করেছেন। তিনি মানছেন, ‘‘টিম পিকে সকলের থেকেই নাম চাইছে। আমার কাছেও চাওয়া হয়েছিল। আমি নাম প্রস্তাব করেছি।’’
এ ক্ষেত্রে একাংশের আপত্তি প্রসঙ্গে নিয়তি বলছেন, ‘‘বাম সরকারই তো আমাদের মাওবাদী সাজিয়েছিল। সে ভাবে ধরলে জঙ্গলমহলে বেশিরভাগ মানুষই দেগে দেওয়া মাওবাদী।’’ শ্যামল বলছেন, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করলে সভাপতি পদে বদল হবে। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’