নদীর জলের স্রোতে ভেঙে গিয়েছে তালছিটকিনির একাধিক বাড়ি। যার মধ্যে রয়েছে আবাস যোজনায় তৈরি ঘরও। নিজস্ব চিত্র
পরিস্থিতি-১: সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি প্রাপকদের নিয়ে চলছে জেলা প্রশাসনের ‘গৃহপ্রবেশ’ কর্মসূচি। সদ্য তৈরি নতুন বাড়িতে প্রবেশের সময় প্রশাসনিক আধিকারিকদের হাত থেকে মিলছে মু্খ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা। স্বভাবতই খুশি উপভোক্তারা।
পরিস্থিতি-২: ওই আবাস যোজনাতেই বছরখানেকে আগে বাড়ি পেয়েছিলেন পটাশপুরের তালছিটকিনি এলাকার বহু বাসিন্দা। গত সেপ্টেম্বরে কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভাঙা জলে তাঁদের অনেকেরই বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের ‘গৃহপ্রবেশ’ কর্মসূচি দেখে তাঁদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। জেগেছে প্রশ্নও— আর কি তাঁরা আবাস যোজনা থেকে টাকা পেয়ে বাড়ি মেরামত করতে পারবেন!
পটাশপুর-১ ব্লকে কেলেঘাই নদীর বাঁধের পাশেই রয়েছে তালছিটকিনি গ্রাম। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা মৎস্যজীবী। অনেকে দিনমজুরিও করেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাঁধ ভেঙে ভেসে যায় তালছিটকিনি-সহ জেলার বহু ব্লক। ভাঙনের একেবারে সামনে থাকা তালছিটকিনি গ্রামের একাধিক কাঁচা ও পাকা বাড়ি ভেসে যায়। প্রাণে বাঁচতে বাড়ি ছেড়ে বাঁধের না ভাঙা অংশে আশ্রয় নিয়েছিলেন ঘরহারারা।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তালছিটকিনিতে স্রোতের মুখে ২৬টি কাঁচা এবং পাকা বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলের তোড়ে বস্তু জমির মাটি সরে গভীর জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। আর ২৬টি বাড়ির মধ্যে অন্তত ১০টি আবাস যোজনায় তৈরি বাড়িও রয়েছে বলে স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রের খবর। এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, আবাস যোজনায় তৈরি বাড়ির কোনটি ভিত-সহ উল্টে গিয়েছে। কোনওটির একটি অংশে পুকুরের মধ্যে হেলে পড়েছে। আবার কোনও বাড়িটির নীচের অংশের মাটি জলের তোড়ে ধুয়ে গিয়ে শূন্যে ঝুলছে। বন্যার আড়াই মাস পরে গ্রামের অন্য বাসিন্দারা ভিটেতে ফিরলেও ওই ২৬টি বাড়ির বাসিন্দারা এখনও বাঁধের উপরে ত্রিপলের তাবুতে বা ক্লাব ঘরে থাকছেন।
বন্যার জল নামার পর তালছিটকিনির বাসিন্দা অধর মান্না ত্রাণ শিবির থেকে এলাকায় গিয়েছিলেন। বছর দুয়েক আগে আবাস যোজনায় তিনি পাকা বাড়ি বানিয়েছিলেন। সেটি আর আস্ত নেই। অধর বলছেন, ‘‘আমরা দরিদ্র। একবার আবাস যোজনার টাকায় বাড়ি বানিয়েছি। বন্যায় সেই বাড়ি আর নেই। এখন কী করে বাড়ি তৈরি করব জানি না।’’ আসব যোজনায় বাড়ি পেয়েছিলেন শুকদেব জানা। তাঁর কথায়, ‘‘বাঁধ ভাঙার পরেই প্রাণ বাঁচাতে কোনও মতে বাঁধে উঠে আসি। জল সরতেই দেখি বাড়ি ভেঙে পড়ে রয়েছে। সেখানে জলাশয় তৈরি হয়েছে। এখনও বাঁধেই রয়েছি।’’
এদিকে, গত সোমবার এবং মঙ্গলবার আবাস যোজনার প্রায় এক লক্ষ ৭৬ হাজার উপভোক্তার বাড়িতে ‘গৃহপ্রবেশ’ কর্মসূচি পালন করছেন জেলা প্রশাসন। এ দিনও পটাশপুর পঞ্চায়েতে কসবা গ্রামে ‘গৃহপ্রবেশ’ কর্মসূচিতে বাড়ি মালিকের হাতে মুখ্যমন্ত্রী ছবি দেওয়া শংসাপত্র তুলে দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অনির্বাণ কোলে। স্বাভাবিক ভাবেই তালছিটকিনির ক্ষতিগ্রস্ত আবাস যোজনার বাড়ি মালিকেরা প্রশ্ন করছেন, তাঁদের কী হবে?
অধর, শুকদেবদের অবশ্য আশ্বস্ত করছে জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলছেন, ‘‘যেখানে আবাস যোজনায় তৈরি বাড়ি ভেঙেছে, সেই এলাকার বিডিও-কে সমীক্ষা করে একটি তালিকা তৈরির কথা বলা হবে। বিডিও-র রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা সরকারের কাছে ওই সকল ব্যক্তিদের নতুন বাড়ি দেওয়ার জন্য আবেদন জানাব।’’