সাজানো পাত। নিজস্ব চিত্র
ধোঁয়া ওঠা গরম লুচি-বেগুনভাজার ভোজে জমে উঠল খুদে পড়ুয়াদের আগামীর শপথ।
বাঁশতলা জুনিয়র হাইস্কুলে নতুন শ্রেণির পড়াশোনা শুরু হবে জানুয়ারি মাসে। তার আগে এলাকার সবাই একদিন সাক্ষর হবে এই মর্মে শপথ নিল খুদেরা। তার সঙ্গেই পাতে পড়ল লুচি, বেগুনভাজা এবং নতুন গুড়ের মিষ্টি।
বাঁশতলা জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক রাজীব দাসের উদ্যোগে এলাকার মা-পিসি-ঠাকুমাদের সাক্ষর করে তোলার কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। রাজীবের উদ্যোগে গত তিন বছর ধরে বাঁশতলা গ্রামে চলছে ‘বিন্দুর পাঠশালা’ কর্মসূচি। প্রতি শনিবার স্কুল ছুটির পরে বাঁশতলা গ্রামের দু’টি স্কুলের পড়ুয়ারাই মূলত, এলাকার বয়স্ক মহিলাদের সহজ-পাঠ দেয়। সেই কাজে গতি আনতে প্রতি বছরই নানা ভাবে পড়ুয়াদের উজ্জীবিত করেন রাজীব। এবার তাঁর পরিকল্পায় সোমবার বিকেলে স্কুল ছুটির পরে হল জমাটি খাওয়াদাওয়া। স্কুল ছুটির আগে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আটা-ময়দা সংগ্রহ করে আনে পড়ুয়ারা। স্থানীয় চাষি পার্বতী মাহাতো খেতের বেগুন দিয়ে সাহায্য করেন। রাজীব তেল কিনে আনেন। জুনিয়র হাইস্কুলের বারান্দায় স্টোভ জ্বেলে ভাজা হয় লুচি আর বেগুন। ডাকা হয় লাগোয়া প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদেরও। এসেছিল কয়েকজন প্রাক্তনীও।
খাওয়ার পরে হয় শপথ পর্ব। সেখানে বলা হয়, এলাকায় একজনও নিরক্ষর থাকবে না। হাতে গোনা যারা স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে, তাদেরও ফিরিয়ে আনার শপথ নেয় পড়ুয়ারা। রাজীব বলেন, ‘‘গ্রামের মা-ঠাকুমারা এখন নিজের পরিবারের স্কুল পড়ুয়ার দৌলতেই সাক্ষর হয়েছেন। নিয়মিত পড়াশোনা করে তাঁরা নাম সই করছেন। হিসেব করতে পারছেন। অঙ্কও কষছেন। অন্য গ্রামের মায়েরাও যাতে এগিয়ে আসেন সেই প্রচার চলছে। বর্ষশেষের সপ্তাহেও পড়ুয়াদের দিয়ে সেই শপথ নেওয়া হয়েছে।’’
ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিডিও চঞ্চলকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই শিক্ষক এলাকার পড়ুয়াদের নিয়ে যে ধরনের সামাজিক কর্মসূচি করে চলেছেন তা প্রশংসনীয়।’’ রাজীবের স্কুলের টিচার ইনচার্জ পার্থসারথি পান্ডা। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের পরে রাজীব বিভিন্ন সামাজিক কাজ করেন। এলাকার পরিবেশেও বদল এসেছে।’’ লাগোয়া বাঁশতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ বিপ্লব মাহাতো জানান, পাশের স্কুলের শিক্ষক হলেও রাজীবের কাজে তাঁদের পড়ুয়ারাও অনুপ্রাণিত হয়।