Soumitra Chatterjee

মঞ্চে উঠে ক্ষমা চেয়েছিলেন সৌমিত্র

বেলদা জাগ্রত সংঘের আয়োজনে ‘রত্নদীপ’ নাটকটিও করে গিয়েছেন সৌমিত্র। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন লিলি চক্রবর্তী, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। শৈলেন্দ্র রাইস মিলের মাঠে নাটক মঞ্চস্থ  হলেও একটা সময় দর্শকের সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, শেষে নাটকটি সকলের জন্য খুলে দিতে হয়েছিল। 

Advertisement

বিশ্বসিন্ধু দে

বেলদা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০০:৫৩
Share:

ফাইল চিত্র।

সালটা ছিল ২০০৩। ‘বেলদা উৎসব’-এর উদ্বোধক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

বেলদার বিডিও অফিসের সামনের মাঠে বসেছিল মেলা-উৎসব। বেলদা পৌঁছনোর রাস্তা গুলিয়ে ফেলায় বেশ কিছুটা ভুল পথে চলে গিয়েছিল সৌমিত্রর গাড়ি। শেষে রাস্তা চিনে বেলদা পৌঁছতে বেশ কিছুটা দেরি হয়ে যায়। তাই সেদিন অভিনেতাকে দিয়ে মেলার পতাকা উত্তোলন করানো যায়নি। মেলায় পৌঁছে অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে প্রথমেই উপস্থিত দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন অভিনেতা। শেষে সৌমিত্রকে দিয়ে মেলার পত্রিকা ‘মুক্তকণ্ঠ’ প্রকাশ করানো হয়েছিল। মুহূর্তগুলো ভুলতে পারছেন না সেদিনের ‘মুক্তকণ্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদক গোপাল বসু।

বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত বাংলার শিক্ষক গোপাল বসু পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন, ‘‘পথ ভুল করে দেরি করে আসার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিছু কথা বলার পর দু’-তিনটি কবিতা আবৃত্তিও করেন। বড় অমায়িক দেখেছিলাম ওঁকে।’’ গোপাল জানান, এতবড় একজন মানুষ অথচ কত সাধারণভাবে তিনি সেদিন ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। ওই দিন সৌমিত্র জানিয়েছিলেন, তাঁর গাড়ির চালকের জন্যই তিনি সময় মতো উপস্থিত হতে পারেননি। তবু এ ব্যাপারে ক্ষমা চাইতে কুণ্ঠা বোধ করেননি শিল্পী।

Advertisement

অভিনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে বেলদায় আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্থানীয় বুম্বা দে, চন্দন বসুরা। সেই সুযোগে অভিনেতার অনেকটা সান্নিধ্যও পেয়েছিলেন তাঁরা। অভিনেতার মৃত্যুর পর, বুম্বা দে সমাজমাধ্যমে অভিনেতার সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘তোমায় ভোলা সম্ভব নয়’! বুম্বা বলেন, ‘‘সেদিন গাড়ির মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উনি আমায় ডেকে দিয়েছিলেন।’’

সৌমিত্রর সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বেলদার জন্মেঞ্জয় সাহুরও। পেশায় শিক্ষক জন্মেজয়ের সঙ্গে কয়েকবার দেখা হয়েছে কিংবদন্তীর। কেশিয়াড়ি থেকে দু’মাস অন্তর প্রকাশিত হত ‘সবুজ’ নামের একটি পত্রিকা। যার সম্পাদক ছিলেন মলয় দাস এবং জন্মেঞ্জয়। জন্মেঞ্জয়ের কথায়, ‘‘আমার দায়িত্ব ছিল বিশিষ্ট মানুষদের সাক্ষাৎকার নেওয়া। একবার (১৯৮৫ সাল) ওঁর বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। দূর থেকে গিয়েছি জেনে, আমাকে অনেকটা সময় দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিউটাউনের রবীন্দ্রতীর্থে দেখা হয়েছিল। কথাও বলেছিলাম। মানুষটিকে কখনও দম্ভ করতে দেখিনি।’’

বেলদা জাগ্রত সংঘের আয়োজনে ‘রত্নদীপ’ নাটকটিও করে গিয়েছেন সৌমিত্র। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন লিলি চক্রবর্তী, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। শৈলেন্দ্র রাইস মিলের মাঠে নাটক মঞ্চস্থ হলেও একটা সময় দর্শকের সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, শেষে নাটকটি সকলের জন্য খুলে দিতে হয়েছিল।

বেলদার সোমনাথ মিশ্র, ঝন্টু কর বলছিলেন, ‘‘সাল ঠিক মনে নেই। নব্বইয়ের দশকের কোনও একটা সময় হবে। নাটকের পরে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। গল্প করার পাশাপাশি আবৃত্তি শোনান।’’ ‘খেলার পুতুল’ সিনেমার একটি অংশের শুটিং হয়েছে দাঁতন লাগোয়া ওড়িশার লক্ষণনাথ জমিদারবাড়িতে। পাশেই ওড়িশার রূপসাতে ছিলেন অভিনতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়।

১৯৮১ সাল নাগাদ জমিদার বাড়ির পুকুর পাড়ে সেদিনের শুটিং প্রসঙ্গে জমিদার পরিবারের সদস্য সৌরেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘ছবির শুটিং হয়েছিল। তবে সন্ধ্যা রায়ের সেই দৃশ্যে সৌমিত্র ছিলেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement