সুনসান মন্দারমণি এখন পর্যটকের অপেক্ষায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ছাড় মিলেছে। তাই করোনা-বিধি মেনেই আজ, সোমবার চালু হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত পর্যটন। দিঘায় গোটা পঞ্চাশেক হোটেল খুলছে। মন্দারমণিতেও শ’খানেক হোটেল খোলার কথা। তবে কর্মী সঙ্কট ও স্থানীয়দের আপত্তি সামলে এই পর্যটন কেন্দ্রগুলি কী ভাবে ছন্দে ফিরবে, প্রশ্ন সেখানেই।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘সোমবার থেকেই দিঘা-সহ রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলি খুলে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা প্রত্যেককেই মেনে চলতে হবে। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত নজরদারি চালাবে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন।’’
করোনার জেরে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছিল ২২ মার্চ। তখন থেকেই রাজ্যের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুরের সব হোটেল একে একে ঝাঁপ ফেলেছিল। ‘আনলক-১’ পর্বে হোটেল, রিসর্ট, রেস্তরাঁ খোলার কথা। সে জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে বিধি-নিষেধ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তা মেনেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দিঘা, মন্দারমণিতে। দিঘা হোটেল মালিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওল্ড এবং নিউ দিঘা মিলিয়ে ছ’শোর কাছাকাছি হোটেল রয়েছে। আজ, সোমবার তার মধ্যে গোটা পঞ্চাশেক ঠখুলবে। সেখানে পর্যটকেরা উঠতে পারবেন। তবে ঢোকা-বেরনোর সময় প্রতিবার দেহের তাপমাত্রা মাপা হবে, নিয়মিত চলবে জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া। তবে কর্মী কম থাকায় বেশিরভাগ হোটেলই খুলছে না। দিঘা হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লকডাউনে অধিকাংশ হোটেলের কর্মীরা বাড়ি চলে গিয়েছেন। ফলে, গোড়ায় অল্প কিছু হোটেলই খুলছে।’’
ক্রমে সব হোটেল খুললে করোনা সংক্রমণ ঠেকিয়ে কী ভাবে পর্যটন ব্যবসা এগোবে তার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে হোটেল মালিক সংগঠন আগামী ১০ জুন বৈঠকে বসবে। শুধু হোটেলই নয়, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর এবং শঙ্করপুরে দর্শনীয় স্থানগুলিও খুলতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবব্রত দাস।
বিধি মেনে সোমবার থেকে মন্দারমণিতে বেশিরভাগ হোটেল খুলে দেওয়ার পক্ষপাতী মালিকেরা। এখানে শ’খানেক হোটেল রয়েছে। তবে মন্দারমণি সংলগ্ন দাদনপাত্রবাড় গ্রামের বাসিন্দারা পর্যটন কেন্দ্র চালুতে আপত্তি জানিয়েছে। সব হোটেল খুলে গেলে, বাইরে থেকে পর্যটকেরা এলে করোনা সংক্রমণ বাড়বে— এই আশঙ্কায় রামনগর ২-এর বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনশো গ্রামবাসী। মন্দারমণির হোটেল ব্যবসায়ীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, জোড়-বিজোড় রীতিতে পর্যটকদের হোটেলের ঘর দেওয়া হবে। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য, দূরত্ব বজায় রেখেই পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। মাস্ক ব্যবহার করা, জীবাণুমুক্ত রাখা এবং নিয়মিত পর্যটকদের দেহের তাপমাত্রা মাপার প্রক্রিয়াও চালু থাকবে।
তবে স্থানীয়রা আপত্তি তোলায় আজ, সোমবার মন্দারমণিতে হোটেল খোলা হলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। স্থানীয় কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপন দাস বলেন, ‘‘আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখার দাবি করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে হোটেল মালিক এবং স্থানীয়দের নিয়ে আগামী রবিবার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার আগে কোনও অসুবিধা হলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’’