চলছে জন্মদিন পালন। নিজস্ব চিত্র
আলো ঝলমলে বিধায়ক কার্যালয়। আনা হয়েছিল বাহারি বেলুন, রাঙতার টুপি। টেবিলে রাখা সাজানোগোছানো কেক।
শুক্রবারই তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সঞ্জয় পানকে। আর রবিবারই ছিল কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহার জন্মদিন। শিউলির জন্মদিন রবিবার সন্ধ্যায় ঘটা করেই পালিত হয়েছে কেশপুরে। অনুগামীদের আনা কেক কেটেছেন শিউলি।
কেশপুরে শিউলির যাতায়াত সেই ২০১৬ সাল থেকে। দলের এক সূত্র জানাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে কোনও বারই এ ভাবে শিউলির জন্মদিন পালন হয়নি কেশপুরে। বস্তুত, প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সঞ্জয়ের সঙ্গে শিউলির বিরোধ তৃণমূলে কারও অজানা ছিল না। সেই ‘কাঁটা’ সরতেই ঘটা করে বিধায়কের জন্মদিন পালিত হল বলে দলের অন্দরে চর্চা চলছে।
সোমবার সকালে শিউলি বলছিলেন, ‘‘দলের কর্মীরাই সব আয়োজন করেছিলেন। আমি ওঁদেরকে বলিওনি রবিবার আমার জন্মদিন ছিল। কী ভাবে যে ওঁরা জানতে পারলেন!’’ জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজক শিউলি-অনুগামী এক যুব নেতার কথায়, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে জন্মদিন আবার অজানা থাকে না কি! দিদি না জানিয়েই সব আয়োজন করেছিলাম। দিনটা তো আমাদের কাছেও স্পেশ্যাল।’’ সঞ্জয় সরেছেন বলে কি আরও স্পেশ্যাল? মুচকি হেসে ওই যুব নেতার জবাব, ‘‘কয়েকটা বছর দমবন্ধ অবস্থায় ছিলাম। এখন প্রাণ খুলে শ্বাস নিচ্ছি।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, রবিবার দলের ব্লক কমিটির বর্ধিত বৈঠক ডেকেছিলেন নতুন ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠী। দলের কেশপুর ব্লক কার্যালয়ে ওই বৈঠকে উত্তমের পাশাপাশি ছিলেন শিউলি, মহম্মদ রফিকরা। সদ্য প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সঞ্জয়, কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী শুভ্রা দে সেনগুপ্ত, দলের অঞ্চল প্রধান, অঞ্চল সভাপতিরাও হাজির ছিলেন। মাস কয়েক আগে কেশপুরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নির্দেশ দিয়েছিলেন, উন্নয়নমূলক কাজকর্মের সিদ্ধান্ত দলে আলোচনা করেই হবে। কেউ একার সিদ্ধান্তে কিছু করবেন না। ওই নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। রবিবারের আলোচনায় শুভেন্দুর বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। জানানো হয়, সাংসদ বা বিধায়কের তহবিল হোক কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির কোনও প্রকল্প, রূপায়ণের আগে দলে আলোচনা হবে। বেশিরভাগের সম্মতি যে কাজে থাকবে সেই কাজই হবে। কেউ ইচ্ছে মতো কোনও খাতে টাকা খরচ করতে পারবেন না।
এই বৈঠকের পরেই সন্ধ্যায় বিধায়কের জন্মদিন পালন হয়। সেখানে উত্তম থাকলেও ছিলেন না সঞ্জয়।
পালাবদলের পর থেকেই একাধিক গোষ্ঠীর দলাদলিতে কেশপুরের তৃণমূল জেরবার। বারবার ব্লক সভাপতি বদল করেও পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। গত ন’বছরে সঞ্জয়কে নিয়ে ৫ জন ব্লক সভাপতির পদ খোয়ালেন। এঁদের মধ্যে সব থেকে বেশি সময় ব্লক সভাপতি ছিলেন সঞ্জয়ই— সাত বছর।
বিধায়কের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে থাকলেন না কেন?
সঞ্জয় শুধু বলছেন, ‘‘বৈঠকের পরে আমি বাড়ি চলে এসেছিলাম।’’