গীতা নিয়ে কলস যাত্রা। মেদিনীপুর শহরে। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
শহর মেদিনীপুরে ‘শ্রীমদ্ ভাগবত কথা জ্ঞানযজ্ঞ’ কর্মসূচির আয়োজন। এই কর্মসূচির প্রচারে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের অনেকে বিজেপির লোক বলেই পরিচিত। বেশ কয়েকজন সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ। ৫ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরে এই কর্মসূচি চলার কথা। সেই মতো প্রস্তুতি সারা হয়েছে। কর্মসূচির প্রচারে দেখা গিয়েছে অভিজিৎ দে প্রমুখকে। অভিজিৎ শহরের বিজেপি নেতা। অভিজিতের অবশ্য দাবি, ‘‘এই কর্মসূচির সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক সম্পর্কই নেই। আমাদের এই কর্মসূচিতে ভাগবত কথার প্রচারই মুখ্য।’’
শহরের বিদ্যাসাগর হল চত্বরে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। উদ্যোগ ‘শ্রী গীতগোবিন্দ ভাগবত সঙ্ঘে’র। এই সঙ্ঘ সূত্রের খবর, ৫ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি, প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। সঙ্ঘের এক কার্যকর্তা বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত, শহর এবং শহরতলির ভাগবতপ্রেমীরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।’’ সঙ্ঘ সূত্রে খবর, বৃন্দাবন ধাম থেকে আগত শ্রীমদ্ ভাগবত কথাবাচক শ্রী শ্রী গোবিন্দবল্লভ শাস্ত্রীজীর দ্বারা পরিবেশিত হবে। কবে, কী বিষয় পরিবেশিত হবে, সেই প্রচারও চলেছে। ৫ ফেব্রুয়ারি শ্রীমদ্ ভাগবত মাহাত্ম্য। ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম স্কন্দ, ভগবানের ২৪ অবতার, নারদ সংবাদ। ৭ ফেব্রুয়ারি শুকদেব মুণির আগমন, ধ্রুব চরিত্র, অজামিল ও ভক্ত প্রল্লাহদ কথা। ৮ ফেব্রুয়ারি গজেন্দ্র মোক্ষ, সমুদ্র মন্থন, বামন অবতার, প্রভু শ্রী রামের জন্ম, কৃষ্ণ জন্ম, নন্দ উৎসব। ৯ ফেব্রুয়ারি শ্রী কৃষ্ণের শৈশব লীলা, গোবর্ধন পূজা, ৫৬ ভোগ। ১০ ফেব্রুয়ারি মহারাস, মথুরা গমন, রুক্মিনী বিবাহ। ১১ ফেব্রুয়ারি সুদামা চরিত্র, ভাগবত বিশ্রাম।
গত ডিসেম্বরে ব্রিগেডে আয়োজিত হয়েছিল ‘লক্ষ কন্ঠে গীতাপাঠ’। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরে আয়োজিত হয়েছে ‘সহস্র কন্ঠে গীতাপাঠ’। গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। ঠিক তার আগের দিন, অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি বেলদায় এই কর্মসূচি হয়েছে। উদ্যোগ ছিল ‘সনাতনী জাগরণ সঙ্ঘে’র। তৃণমূল সহ বিজেপি-বিরোধী শিবিরের দাবি ছিল, এই কর্মসূচি আয়োজনের আড়ালে ছিল গেরুয়া শিবিরই। উদ্যোগী সঙ্ঘের তরফে বাসুদেব বেরা অবশ্য দাবি করেছিলেন, ‘‘অরাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। আমরা চেয়েছিলাম, সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা দলে দলে এই কর্মসূচিতে যোগদান করুন।’’ বেলদার এই কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ প্রমুখকে। গীতাপাঠের এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রিতই ছিলেন শুভেন্দু, দিলীপরা।
একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, সামনে লোকসভা ভোট। লোকসভা ভোট পর্যন্ত রামমন্দির হাওয়া জিইয়ে রাখতে তৎপর গেরুয়া শিবির। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে জেলায় প্রচার চলেছে। পরে রামমন্দির দর্শনের প্রচার শুরু হয়েছে। প্রচারে সামনে থাকছেন সঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবকেরা। পিছনে সেই বিজেপির নেতাকর্মীরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। মেদিনীপুর এবং ঘাটাল। প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্র থেকে ৬ হাজার, অর্থাৎ জেলা থেকে সবমিলিয়ে ১২ হাজার ‘রামভক্ত’কে অযোধ্যায় নিয়ে গিয়ে রামমন্দির দর্শনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর।
ঘটনাচক্রে, এই আবহে মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘শ্রীমদ্ ভাগবত কথা জ্ঞানযজ্ঞ’ কর্মসূচি। এক সপ্তাহ ধরে এই কর্মসূচি হবে। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের দাবি, ‘‘এটি কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগই নেই।’’ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষের কথায়, ‘‘বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মাধ্যমে এখন নানা কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে ভোটের বৈতরণী পার হতে চাইছে ওরা (বিজেপি)। তবে ওদের ইচ্ছে পূরণ হবে না!’’ কর্মসূচির সূচনায় রবিবারই শহরে ‘কলস যাত্রা’ হয়েছে। কীর্তন ও শঙ্খধ্বনি সহযোগে।
‘কলস যাত্রা’ হয়েছে। ভোটের কলস পূর্ণ হবে কিনা তা বলবে লোকসভা ভোটের ফল।