বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম মহকুমাশাসকের দফতরে বিদায়ী সভাধিপতি মাধবী। নিজস্ব চিত্র debrajghoshn.abp@gmail.com
‘হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে’
এখন হয়তো এই গানের কলিই গুণগুণ করছেন ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস। দল এবার টিকিট দেয়নি। তবে তিনি হাল ছাড়তে নারাজ। বৃহস্পতিবার তিনি মনোনয়ন দিয়েছেন তৃণমূলের হয়েই। জানাচ্ছেন, দল প্রতীক না দিলে লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন নির্দল হিসেবে। শুধু মাধবী নন, তাঁর পথেই এগোচ্ছেন জেলা পরিষদের বিদায়ী বোর্ডের আরও পাঁচ কর্মাধ্যক্ষ।
এবার ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় সবাই নতুন মুখ। এখানে গত বারের জয়ী কোনও সদস্যকেই এবার প্রার্থী করেনি রাজ্যের শাসক দল। আলাদা করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করাও হয়নি। মনোনীত প্রার্থীদের ফোন করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মু। সেই ফোন পেয়ে অনেকে বুধবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। যাঁরা বাকি ছিলেন তাঁরা মনোনয়ন জমা দেন বৃহস্পতিবার। এদিনই মনোনয়ন দিতে দেখা গেল মাধবীকে। তিনি ছাড়াও বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শুভ্রা মাহাতো, বন ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মামণি মুর্মু, বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ সুজলা তরাই, প্রাণী ও মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সুপ্রিয়া মাহাতো ও কৃষি-সচ কর্মাধ্যক্ষ তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মাধবীর মতো বাকিরাও মনোনয়ন পত্রে নিজেদের তৃণমূল প্রার্থী বলেই উল্লেখ করেছেন।
মাধবীর অভিযোগ, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেলা নেতা-নেত্রীরা নিজেদের স্বার্থে এইরকম প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। নবজোয়ারের ভোটাভুটি মানেননি তাঁরা। জেলা পরিষদের পুরনো একজনও রইল না, এরকম কোথাও হয়েছে!’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘এদিন তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। দলীয় প্রতীক না পেলে নির্দল হয়ে লড়াই করব।’’ মামনি বলছেন, ‘‘এখনও তৃণমূলেই রয়েছি। তৃণমূলের হয়েই মনোনয়ন জমা দিতে এসেছি। প্রতীক দেবে কি না তা দল ঠিক করবে।’’ সুজলার কথায়, ‘‘দিদির উন্নয়ন আমাদের হাত হয়ে মানুষের কাছে পৌঁছেছে। মানুষের চাপেই দাঁড়িয়েছি। দলের নামেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। প্রতীক না দিলেও নির্দল হয়ে লড়াই করব।’’ শুভ্রার দাবি, দলের তরফ থেকে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। তাই তিনি শেষ দিনে দলের হয়েই মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দল জেলা পরিষদে কারও নাম ঘোষণা করেনি। গোপনে কে কাকে ফোন করল সেটা তো আমরা বলতে পারব না।’’
জামবনি ব্লকে জেলা পরিষদের আসনে দাবিদার ছিলেন জেলা তৃণমূলের এসটি সেলের সভাপতি অর্জুন হাঁসদা ওরফে লাল। তবে শেষ মুহূর্তে তাঁকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। হাল ছাড়তে নারাজ অর্জুনও। তিনিও এদিন তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
পুরো বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা দলের তরফে ঝাড়গ্রামে টিকিট বণ্টনের দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘দল নির্দিষ্ট ভাবে নিজেদের প্রার্থী ঠিক করেছে। সেভাবেই তাঁদের জন্য প্রতীক বরাদ্দ হচ্ছে। তার বাইরে কোনও কিছুই নয়। এটা যে যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’’