সুরানানকার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনে কেন্দ্রের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকা আটকে গিয়েছে। ফলে রাজ্যের আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরগুলির (আগে যেগুলি হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার বা রাজ্যের দেওয়া নাম অনুযায়ী সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল) পরিষেবা ধাক্কা খাচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি ঠিক কী? কেমন পরিষেবা মেলে এখানে? মঙ্গলবার সকালে তাই ঘুরে দেখলেন আনন্দবাজারের প্রতিবেদকেরা।
চিকিৎসক বাড়ন্ত
পাঁশকুড়া এলাকায় চারটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়েছিল। চিকিৎসক না থাকায় তার মধ্যে দু'টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ। বাকি দু'টিতে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়মিত মেলেনি বলে অভিযোগ। একেই এই কেন্দ্রগুলির নাম ও রং নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ তুঙ্গে। তার উপর বিতর্ক আরও বাড়িয়ে এই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির নামের আগে আবার ‘পৌর’ শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে অসুস্থ শাশুড়ির জন্য ব্যথার ওষুধ আনতে দিয়েছিলেন পাঁশকুড়া শহরের সুরানানকারের বাসিন্দা সোনালি সামন্ত। তিনি বাতে কষ্ট পাচ্ছেন। বাড়ি সামনের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। গত বছর জুলাই মাসে পাঁশকুড়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সুরানানকারে একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়। তখন এক জন চিকিৎসক ওই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিয়মিত আসতেন। মাস তিনেক আগে ওই চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সেই থেকে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। আশা কর্মীরা মাঝেমধ্যে আসেন অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের হেলথ কার্ড তৈরি করে দেওয়ার জন্য। আর কোনও চিকিৎসা পরিষেবা আর মেলে না। চিকিৎসক না থাকায় পাঁশকুড়ার নারান্দা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা চালুই হয়নি।চিকিৎসকের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বালিডাংরি এবং চাঁপাডালি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র দু'টিও।
প্রবেশ দ্বারেই তালা
হলদিয়া পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, মূল প্রবেশ দ্বারে তালা ঝুলছে! স্থানীয়দের দাবি, মাসখানেকের বেশি এই কেন্দ্রটি বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে পুরসভার একটি হলের দোতলায় এটি চালু করা হয়েছিল ২০২২ সালে ১৫ জুলাই। কিন্তু চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। রক্ত পরীক্ষাও করা হত না। অস্থায়ীভাবে চালু করা হয়েছিল সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। স্থায়ী ভবনের নির্মাণের কাজ চলছে। যে সব স্বাস্থ্য কর্মীরা সেখানে কর্মরত ছিলেন তাদের সিংহভাগই অন্যত্র কাজ পেয়ে চলে গিয়েছেন।
নাগালে পরিষেবা
মঙ্গলবার দুপুর ১২ নাগাদ কাঁথি শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত জগন্নাথপুরে সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় দু-তিন জন মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা সকলেই অন্তঃসত্ত্বা। তাঁদেরই এক জন জানালেন,"সপ্তাহে দু’দিন এখানেই চিকিৎসা পরিষেবা মেলে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিতে পারি। টেলিমেডিসিন পরিষেবাও পাচ্ছি।" আরেক জন মহিলা বললেন,"আগে বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে যেতে হত। এখন বাড়ির কাছে এখানে সব পরিষেবা পাচ্ছি।"আপাতত সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ভাড়া ঘরেই চলছে। সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মৌমিতা জানা বললেন, "প্রতি সপ্তাহে সোম এবং বুধবার কেন্দ্র খোলা হয়। দু’দিন একশোর বেশি মানুষ পরিষেবা পেতে পান।’’
সুবিধা টেলিমেডিসিনেরও
কয়েক মাস আগেও হলদি নদীর তীরে ভাড়া বাড়িতে চলত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। নন্দকুমার ব্লকের নরঘাট এলাকার সেই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন নিজস্ব পাকা বাড়ি পেয়েছে। এখন সেটি সাদা-নীল রঙের নরঘাট সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গ্রামের এক বাসিন্দার দান করা জায়গায় ৩৪ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন। তবে ওই কেন্দ্রের চিকিৎসক একই সঙ্গে স্থানীয় শীতলপুর পশ্চিম গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার অন্য সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিরও দায়িত্বে রয়েছেন। নরঘাট সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাহাড়ির চক, সাতেরচক ও পূর্ব গুমাই গ্রামের বাসিন্দারা চিকিৎসার জন্য আসেন। প্রতিদিন ৩০-৪০ রোগী হয়। মঙ্গলবার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা স্থানীয় ৬৫ বছরের বৃদ্ধ ধীরেন্দ্রনাথ সাহু বলেন, ’’এখানে খুব ভাল পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে।’’ এক কর্মী জানালেন, ’’এখানে আসা রোগীদের মধ্যে সুগার, প্রেশারের রোগী বেশী। এ ছাড়াও সর্দি, কাশি-সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন। এলাকার প্রসূতিরাও আসেন। প্রতিমাসে গড়ে ৫-৬ জন নতুন প্রসূতির নাম নথিভুক্ত হয়। টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে।