বাড়ছে হাতির তাণ্ডব, হয়নি পৃথক বনবিভাগ

২০১৬ সালে এই নতুন বন বিভাগ তৈরির জন্য বিভাগীয় স্তরে পকিল্পনা গ্রহণের কাজ অনেকটাই এগোয়। তারপর প্রকল্পটি এখন কার্যত ঠান্ডা ঘরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর— দুই জেলায় প্রায়ই তাণ্ডব চলে হাতির। ফাইল চিত্র

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দলমার হাতির পাল। দাঁতালের হানায় মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের। অথচ বিস্তীর্ণ বিচরণক্ষেত্রে হাতিদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে বছর তিনেক আগে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এই তিন জেলার তিনটি বনবিভাগ ভেঙে ৮টি রেঞ্জ নিয়ে নতুন ময়ূরঝর্না বনবিভাগ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আজও চালু করা যায়নি প্রস্তাবিত ওই বনবিভাগ।

Advertisement

দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে এটিই রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার অধীনে একমাত্র বনবিভাগ হওয়ার কথা ছিল। প্রস্তাবিত এই বনবিভাগ গঠনের কারণ হিসেবে বন দফতরের যুক্তি ছিল, দলমা থেকে আসা হাতির দলের জন্য বিস্তীর্ণ বিচরণক্ষেত্রে তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে রাখা যাবে। সেখানে হাতিদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার নানা পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছিল। হাতি নিয়ে অভিজ্ঞ বনকর্তাদের দাবি, স্বাভাবিক পরিবেশে উপযুক্ত বাসস্থান ও পর্যাপ্ত খাবার পেলে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে হাতিদের লোকালয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যাবে। হাতির গতিবিধির জন্য বিশেষ বনবিভাগ থাকলে জঙ্গলমহলে হাতির সমস্যা অনেকটাই কমবে।

২০১৬ সালে এই নতুন বন বিভাগ তৈরির জন্য বিভাগীয় স্তরে পকিল্পনা গ্রহণের কাজ অনেকটাই এগোয়। তারপর প্রকল্পটি এখন কার্যত ঠান্ডা ঘরে। বন দফতর সূত্রে খবর, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা এখনও বরাদ্দ হয়নি। তাছাড়া প্রকল্পটি রূপায়ণ করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সময় প্রয়োজন। ময়ূরঝর্না বন বিভাগের প্রস্তাবিত এলাকায় প্রাকৃতিক পাহাড় জঙ্গল থাকলেও হাতিদের জন্য উপযুক্ত খাবারের অভাব রয়েছে। সেই কারণে হাতিদের উপযোগী প্রাকৃতিক খাবারের সংস্থানের জন্য সময় লাগবে।

Advertisement

এ দিকে গত তিন দশক ধরে দলমার পরিযায়ী হাতির দল দক্ষিণবঙ্গে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঠের ফসল, বাগানের আনাজ, চাষির গোলার ধান খেয়ে হাতিদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন হয়েছে। প্রতি বছর হাতির সংখ্যা বাড়ছে। দলমার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু হাতি এলাকার জঙ্গলগুলিতে ‘রেসিডেন্ট’ হয়ে স্থায়ী ভাবে থেকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মানছেন বনকর্মীদের একাংশ।

বন দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রতি বছর হাতির হানায় গড়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ফসল ও সম্পত্তি ক্ষতির জন্য প্রতি বছর জেলায় ক্ষতিপূরণ দিতেই বন দফতরের খরচ হয় গড়ে ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া হুলাপার্টি দিয়ে হাতির দলকে এলাকা থেকে খেদানোর জন্যও দৈনিক বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হয়। হাতির হানায় প্রাণহানি, ফসল নষ্ট, বাড়ি ও সম্পত্তি ক্ষতির পরিমাণ উত্তরোত্তর বেড়ে চলায় বন আধিকারিকদের একাধিকবার ভর্ৎসনাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু হাতিদের স্বাভাবিক গতিপথে বাধা দিতে গেলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেড়ে যায়। এবং হচ্ছেও সেটা। হাতিদের লোকালয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মানছেন এলাকাবাসী। তবে বন দফতর সূত্রে খবর, প্রস্তাবিত ময়ূরঝর্না বন্যপ্রাণ বনবিভাগটি বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণ আইন অনুযায়ী সেখানে কোনও ধরনের পাকা রাস্তা-সহ জনসাধারণের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ সহজে করা যাবে না। এই জটিলতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না।‌

বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে এই প্রকল্পের বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মিটিং-এ ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement