শুনশান মেচেদা সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।
ধর্মঘট সফল করতে সকাল থেকেই রাস্তায় নেমেছিলেন এসইউসি কর্মী-সমর্থকরা। তবে পূর্ব মেদিনীপুরে শুক্রবার সেই বন্ধের সর্বাত্মক প্রভাব পড়ল না। জেলা সদর তমলুক, শিল্পাঞ্চল হলদিয়া, এগরা কার্যত সচলই থাকল। সরকারি অফিসগুলিতেও উপস্থিতি ছিল ৯০ শতাংশের বেশি। অধিকাংশ দোকানও খোলা ছিল। শুধু বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু এলাকায় ধর্মঘটে দোকানপাট এ দিন বন্ধ থেকেছে। আর রাস্তায় যানবাহন চলেছে অন্যদিনের থেকে বেশ কম। এসইউসি’র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক প্রণব মাইতি বলেন, ‘‘ধর্মঘটে জেলা জুড়ে ব্যপক সাড়া মিলেছে। বহু বাস চলেনি।’’
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুন এবং প্রতিবাদ মিছিলের সময় ওই হাসপাতালে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে এ দিন ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট ডাকে এসইউসি। পাশাপাশি, বিজেপিও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিল। এ দিন সকাল থেকে তমলুকের মানিকতলা, হাসপাতাল মোড়, মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, নোনাকুড়িতে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে অবরোধ শুরু হয়। বিক্ষোভ চলে হলদিয়া- মেচেদা জাতীয় সড়ক, দিঘা-কলকাতা জাতীয় সড়কেও। বিকেলে বিজেপি মানিকতলা ও রাধামণিতে রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশ অবরোধ স্থলে থাকলেও কোথাও তা তোলার চেষ্টা করেনি বলে দাবি।
জেলা সদরে অবশ্য বাজারহাট খোলা ছিল। খোলাছিল সব প্রাথমিক, হাইস্কুল, সরকারি অফিস। স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার কম ছিল। তমলুক হ্যামিল্টন হাই স্কুলের প্রবেশ পথে এসইউসি কর্মীরা অবরোধ করেন। তাঁরা অভিভাবকদের বোঝানোর পরে পড়ুয়ারা ফিরে যায়। জেলাশাসক ও জেলা পরিষদ- সমস্ত সরকারি অফিসেই কর্মীদের অধিকাংশ উপস্থিত ছিলেন। তবে সাধারণ মানুষের দেখা মেলেনি। জেলা আদালতে অবশ্য আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেননি।
শিল্প শহরে সমস্ত কারখানাতেই এ দিন উপস্থিতির হার ছিল ১০০ শতাংশ। একই হাল সরকারি ও বেসরকারি অফিসে। দুর্গাচকের মঞ্জুশ্রী মোড়ে অল্প সংখ্যক এসইউসি সমর্থক রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। পুলিশ
কিছু সময়ের মধ্যেই তাঁদের সরিয়ে দেয়। শিল্প শহরে সরকারি বাস চলাচল করলেও বেসরকারি বাস রাস্তায় তেমন একটা দেখা মেলেনি। তবে টোটো, অটো, ট্রেকারের দেখা মিলেছে রাস্তায়। বাস মালিকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার বেরা বলেন, ‘‘ধর্মঘটে আমাদের নৈতিক সমর্থন ছিল। তাই জেলায় সব রুটে বেসরকারি বাস চালানো বন্ধ রাখা হয়েছিল।’’
কাঁথি মহকুমায় মিশ্র প্রভাব পড়েছে। কাঁথি থেকে কলকাতা বা মেদিনীপুরগামী বাস চলাচল বন্ধ ছিল। হাতেগোনা কয়েকটি সরকারি বাস দিঘা থেকে কলকাতা, বর্ধমান, গড়িয়া রুটে চলেছে। মহকুমা সদর শহর মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। শহরের সুপার মার্কেট, নেতাজি মার্কেটের মত মাছ ও আনাজের পাইকারি বাজার খোলা ছিল। বিক্রি বাট্টা ভালই হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। বড় ডাকঘরের সামনে এ দিন ধর্মঘটের সমর্থনে অবস্থান করেন এসইউসি কর্মীরা। তাঁরা ডাক বিভাগের কর্মচারীদের ঢুকতে বাধা দেন। কাঁথির পুলিশ গেলে তাদের সঙ্গে বচসা হয় এসইউসি কর্মীদের। পরে পুলিশ ডাকঘরের গেটের তালা খুলে দেয়। একই রকম ভাবে কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের গেট অবরুদ্ধ করেন বিক্ষোভকারীরা। খড়্গপুর বাইপাস এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেছিল বিজেপি।
সকালে এগরা শহরে রাজ্য সড়কে ধর্মঘট সমর্থকেরা মিছিল করেন। তবে রাজ্য সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। তবে পুলিশকে কোথাও বলপ্রয়োগ করতে দেখা যায়নি। প্রতিদিনের মতো এদিনও দোকান বাজার স্বাভাবিক ছিল। এগরার ভবানীচকে ও পটাশপুরের চিস্তিপুর, ভগবানপুরে বিজেপি এক ঘণ্টা ধরে রাস্তা অবরোধ করে। এসইউসি কর্মীরা সকাল ৮টায় কোলাঘাটের দেউলিয়ায় ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ করেন। আধঘণ্টা ধরে চলে অবরোধ। সকাল ৯টার সময় কার্যত শুনশান ছিল মেচেদা পাঁচ মাথার মোড়। এ দিন পাঁশকুড়া ব্রাডলিবার্ট হাইস্কুলের দরজায় পড়ুয়াদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।