আলোর পসরা মেদিনীপুরের সিপাইবাজারে। নিজস্ব চিত্র।
সব রকম বাজিতেই জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। দীপাবলির আগে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ফাঁপরে পড়েছেন বাজি বিক্রেতারা। বাজি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা তো দূর, পরিস্থিতি সামাল দিতে বাজির বদলে মোমবাতি, মাটির প্রদীপ বা রকমারি বৈদ্যুতিন আলো এনে বিক্রি করার কথা ভাবছেন অনেকে। বাজি উদ্ধারে জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে পুলিশের অভিযানও।
গড়বেতার ধাদিকা, রাধানগর, খড়কুশমা, গোয়ালতোড়ের হুমগড়, আমলাশুলি, গোয়ালতোড় বাজার, চন্দ্রকোনা রোডের সাতবাঁকুড়া, ডাবচা, নয়াবসত-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর কালীপুজোর আগে নানা শব্দ ও আতসবাজি নিয়ে বিক্রি করতে বসেন খুচরো বিক্রেতারা। এই সব বাজির বেচা-কেনা চলে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত। মেদিনীপুর, হাওড়া বা বাইরের থেকে ১৫-২০ হাজার টাকার বাজি কিনে এনে বিক্রি করে হাজার পাঁচেক টাকা রোজগার করেন তাঁরা। এ বার সব রকমের বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ফাঁপড়ে পড়েছেন এই খুচরো বাজি বিক্রেতারা। গড়বেতার মধুসূদন মাইতি ১০ হাজার টাকার বাজির বরাত দিয়ে এসেছিলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের এক বড় ব্যবসায়ীর কাছে। মধুসূদন বলেন, ‘‘ওই ব্যবসায়ীকে ফোনে বাজি পাঠাতে নিষেধ করে দিয়েছি, এ বার জমা টাকাটা ফেরত নিতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘ভাবছি নানা রকমের মোমবাতি এনে বিক্রি করব।’’
অন্য দিকে, মেদিনীপুর গ্রামীণের ছেড়ুয়া বাজি তৈরির জন্য বিখ্যাত। এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবার বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এ বারও তাঁরা বাজি তৈরি করেছেন। কেনা-বেচাও শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক কড়াকড়ি মুখে ছেড়ুয়ার স্থানীয়দের অবশ্য সাফাই, ‘‘এখানে শব্দবাজি তৈরি হয় না। শুধু আতসবাজিই তৈরি হয়।’’ তবে আতসবাজির আড়ালে যে শব্দবাজিও তৈরি হয়, তার প্রমাণ মিলেছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় হানা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ নিষিদ্ধ শব্দবাজি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
চন্দ্রকোনা রোডের নবকলার খুচরো বাজি বিক্রেতা আসগর আলি খান বলেন, ‘‘এ বার রোজগারের আশা ছাড়তে হবে। তাই রকমারি টুনি-লাইট আর মোমবাতি বিক্রি করব।’’ গড়বেতার আমলাগোড়া অঞ্চলের খুচরো বিক্রেতারা মোমবাতি আর মাটির প্রদীপ এনে বিক্রি করবেন বলে ঠিক করেছেন। এক কথায় আদালতের রায়ে বাজি বিক্রি করে ফাটকা রোজগারের আশা ছাড়ছেন খুচরো বাজি বিক্রেতারা। এ দিকে আড়ালে কেউ শব্দবাজি বিক্রি করছেন কি না, তা দেখতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবারই গড়বেতা থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে গড়বেতার তিনটি ব্লকের কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের ডেকে বাজিতে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়েছে।
মেদিনীপুর শহরে যাঁরা বাজি বিক্রি করেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই অন্য ব্যবসা রয়েছে। কারও মুদি দোকান রয়েছে, কারও অন্য কোনও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান রয়েছে। এক মুদি দোকানির কথায়, ‘‘এ বারও দোকানের সামনে আতশবাজির পসরা সাজানোর কথা ভেবেছি। শব্দবাজি রাখার প্রশ্নই নেই।’’