মৎস্যজীবীদের ট্রলার ফিরছে দিঘা মোহনায়। নিজস্ব চিত্র
শ্রাবণ মাসের ভরা বর্ষা। তবুও যেন উলট পুরাণ! এক সময় যেখান থেকে ‘রুপোলি শস্য’ রাজ্যের নানা প্রান্তে যেত, সেই
দিঘা মোহনায় কার্যত ইলিশ মাছ নেই বললেই চলে।
মাঝ সমুদ্র থেকে প্রায় ফাঁকা অবস্থাতেই ফিরে আসছে শয়ে শয়ে ট্রলার। শুধু ইলিশ নয়, অন্য সামুদ্রিক মাছের যোগান গত বছরের তুলনায় অনেকটা কমে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। ফলে খরচের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন
ট্রলার মালিকেরা।
মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে লকডাউন শুরু হয়েছিল। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সমুদ্রে মাছ শিকার। পরে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ব্যান পিরিয়ড’ দু’সপ্তাহ এগিয়ে আনায় গত ১৫ জুন থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় এবং আগের তুলনায় দূষণ অনেকটা কমে যাওয়ায় এবার ইলিশ অনেক বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু ছোট এবং বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ট্রলার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গেলেও কেউই প্রায় আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছে না।
বিগত বছরগুলিতে এই সময় ইলিশে ভরে উঠত দিঘা মোহনা। এখান থেকেই কাঁথি-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে ইলিশ বিক্রি হত। কিন্তু এ বছর মরসুম শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক বাদে একদিনে দেড় কুইন্ট্যাল ইলিশ আমদানি হয়েছিল। তার পরে আ তেমন বেশি পরিমাণে ইলিশ আসেনি। এ দিকে, ঝিরঝিরের বৃষ্টির মতো ইলিশের আর্দশ আবহাওয়া কিন্তু বজায় রয়েছে।
স্বপনকুমার দাস নামে এক মৎস্যজীবী বলেন, ‘‘লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে প্রায় এক মাস হতে চলল। কিন্তু ইলিশ দূর অস্ত, অন্য সব রকমের সামুদ্রিক মাছেরও দেখা নেই বললেই চলে।’’ এদিকে এক একটি ট্রলার সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার আগে তাতে বরফ, জ্বালানি এবং মৎস্যজীবীদের পারিশ্রমিক, খাবার বাবদ এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়। মাছ না আসায় সেই টাকা কোথা আসবে ভেবে পাচ্ছেন না ট্রলার মালিকেরা। সুনীলকুমার বর্মন নামে আর এক মৎস্যজীবীর কথায়, ‘‘এক সপ্তাহ বাদে ফাঁকা অবস্থাতেই ট্রলার নিয়ে মোহনাতে ফিরছি। দিঘায় পমফ্রেট, বাউল, চিংড়িরও জোগান অনেকটাই কমে গিয়েছে।’’
এর ফলে মাছের ভরা মরসুমে দিঘা মোহনা মৎস্য নিলাম কেন্দ্র প্রায় ফাঁকা অবস্থায় পড়ে। ‘দিঘা মোহনা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র কর্মকর্তা নবকুমার পয়ড়্যা বলেন, ‘‘দিঘায় ইলিশের খরা চলছে। যেসব ট্রলার শুধুমাত্র ইলিশ মাছ ধরে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি না ইলিশ মাছ আগামী কয়েকদিনে ধরা না পড়ে, তবে ওইসব ট্রলার
মালিকদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তবে আগামী দিনে ইলিশের দেখা মিলবে বলে আমরা আশাবাদী।’’
আপাত সেই আশায় বসে মৎস্যজীবী থেকে ভোজনরসিক বাঙালি।