রাজ্যের দরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে রাজ্য সরকার চালু করেছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। এ বার সেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডকে কেন্দ্র করে প্রতারণার অভিযোগ উঠল।
ফেব্রুয়ারি মাসে কোলাঘাটের দেড়িয়াচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্যশিবির করার জন্য আশা কর্মীদের কাছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে ফোন আসে। যথারীতি এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় ওই শিবির। শিবিরে আগত মহিলাদের বোঝানো হয় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা না নিলে বছরে দেড় লক্ষ টাকা সরকার ফেরত নিয়ে নেবে রাজ্য সরকার। হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে তাঁদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষার সুবিধার কথা জানানো হয় শিবিরে আগত মহিলাদের। সেই অনুযায়ী গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শ্রীকান্ত মাজি নামে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্মী এক শিশু সহ পাঁচজন মহিলাকে ওই নার্সিংহোমে নিয়ে আসেন।
ওই মহিলাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাঁদের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। স্যালাইন, ইঞ্জেকশন দেওয়ার পাশাপাশি চলে একাধিক পরীক্ষা। ২৮ ফেব্রুয়ারি কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার কথা জানালেও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের ছাড়েনি বলে অভিযোগ। ওই মহিলারা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বললে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সক্রিয় না থাকায় টাকা তোলা যাচ্ছে না। তাই তাঁরা নগদ টাকা দিলে তবেই তাঁদের ছাড়া হবে। এর পর তাঁদের প্ৰত্যেকের হাতে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে মহিলাদের অভিযোগ।
মহিলাদের অভিযোগ, তাঁরা টাকা দিতে পারবেন না জানানোয় নার্সিংহোমের একটি ঘরে তাঁদের আটকে রাখা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় তাঁদের মোবাইল ফোনও। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিণতি ভাল হবে না বলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ। পাঁচজন মহিলার মধ্যে একজন নিজের মোবাইলটি লুকিয়ে রেখেছিলেন। তার সাহায্যে তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গত ৩ মার্চ হীরাপুর গ্রামের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী শেখ ইসমাইল নায়েক ওই মহিলাদের বাড়ির লোকজনকে নিয়ে সাঁকরাইল থানায় যান। এরপর সাঁকরাইল থানার পুলিশ ওই নার্সিংহোমে হাজির হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে ৪ মার্চ ওই মহিলাদের ছেড়ে দেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য যাওয়া ওই পাঁচ মহিলার এরজন বিন্দুবালা জানা বলেন, ‘‘প্রথমে আমাদের বলা হয়েছিল বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে এবং তিনদিন পর ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পাঁচদিন পর নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বিপুল টাকার বিল হাতে ধরিয়ে দেয়। টাকা না দিলে আমাদের ছাড়া হবে না বলে জানায়।’’ যে নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার কর্পোরেট অ্যান্ড ক্রেডিট কন্ট্রোল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘ওই রোগীদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডগুলি সক্রিয় ছিল না। আমরা ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিমা সংস্থার (টিপিএ) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয় ওই রোগীদের কোনও টাকা দেওয়া যাবে না। আর রোগীদের আটকে রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিমা সংস্থার এক আধিকারিক জানান, একই এলাকার পর পর সিরিয়াল নম্বরের একাধিক কার্ড থেকে টাকা জমা করার আবেদন আসায় তাঁদের সন্দেহ হয়। তাই তাঁরা কার্ডগুলি সাময়িকভাবে ব্লক করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’’ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সাঁকরাইল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলারা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘কী ঘটেছিল সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগকারীদের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও অভিযোগ জানাতে বলব।’’