অখিল-বিতর্ক চলছেই। —ফাইল চিত্র।
মন্ত্রী অখিল গিরির গ্রেফতারি চেয়ে মিছিলে হেঁটে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন তৃণমূলের এক নেতা। এ নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যে নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট পাঠালেন পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূল নেতৃত্ব।
নন্দীগ্রামে প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতির দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিলের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কোমর বেঁধে প্রতিবাদে নামে রাজ্য বিজেপি। অখিলের হয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ক্ষমা চাইলেও শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারেরা এ নিয়ে এখনও সরব। সেই আবহে জেলা তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ালেন পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কালীপদ মাজি। যদিও তৃণমূলের তরফে দলের সর্বস্তরে অখিল-বিতর্কে কোনও মন্তব্য বা কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অভিযোগ, সেই নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই অখিলের শাস্তির দাবিতে আদিবাসী সংগঠনের একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন কালীপদ।
‘জয় ভূমিজ জয় মুন্ডা’ নামের ওই সংগঠনের মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন স্থানীয় বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। বেনেগলেসা থেকে রাতুলিয়া বাজার পর্যন্ত ওই মিছিল থেকে অখিলের গ্রেফতারের দাবি ওঠে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায় তৃণমূলের অন্দরে। শাসক দলের পঞ্চায়েত প্রধান হয়েও কেন অখিল-বিরোধী মিছিলে পা মেলালেন কালীপদ, সেই প্রশ্ন ওঠে।
এতে কালীপদের অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আগে দেশ, পরে দল। অখিল গিরি আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি তথা দেশের রাষ্ট্রপতিকে অসম্মান করেছেন। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে ওই প্রতিবাদ মিছিল করেছি।’’ কিন্তু দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ হল না এতে? তৃণমূল নেতার জবাব, ‘‘আমাকে দলের উচ্চ নেতৃত্ব ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে, আমি মিছিল করেছি কি না। জবাবে আমি ‘হ্যাঁ’ বলেছি। এর পর আর কোনও কথা হয়নি।’’ কালীপদ এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ জন্য দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কি না, এ নিয়েও তিনি ভাবিত নন।
অন্য দিকে, কালীপদের মিছিল করা ঠিক হয়নি বলেই জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘অখিল গিরির ঘটনায় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ক্ষমা চেয়েছেন। এর পর দলের আর কেউ এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে পারবে না বলে জেলা নেতৃত্বকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কালীপদ কেন এমনটা করলেন, জানা নেই।’’ সৌমেনের সংযোজন, ‘‘গোটা ঘটনার রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠিয়ে দেব। তাঁরা যেমনটা নির্দেশ দেবেন সেই মতোই পদক্ষেপ করা হবে।’’
এ নিয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলেও কিছু ভাল মানুষ রয়েছেন। তাঁরা এই ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। কালীপদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে বলেই উনি রাষ্ট্রপতির অসম্মানের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন। কালীপদ ওঁদের সমাজের চাপে পড়েই মিছিলে হেঁটেছেন।’’