PMAY

শহরে আবাসে বরাদ্দ, স্বস্তিতে উপভোক্তারা

মেদিনীপুর শহরে আবাস যোজনায় প্রায় দু’হাজার বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। সম্প্রতি এই খাতে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা এসেছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। এরপর প্রায় এক হাজার উপভোক্তাকে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

আবাস যোজনায় গ্রামীণ এলাকায় যেমন গরিব মানুষদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্প রয়েছে, তেমনই শহরেও রয়েছে এই প্রকল্প। কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনে এ রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় আবাসে বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। তবে শহরে কিন্তু ধাপে ধাপে বরাদ্দ মিলছে।

Advertisement

মেদিনীপুর শহরে আবাস যোজনায় প্রায় দু’হাজার বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। সম্প্রতি এই খাতে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা এসেছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। এরপর প্রায় এক হাজার উপভোক্তাকে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান সৌমেন খান মানছেন, ‘‘আবাস যোজনায় সম্প্রতি বরাদ্দ এসেছে। উপভোক্তাদের কাছে আরেক কিস্তির টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’’

পুরসভা সূত্রে খবর, ২,২৪৮টি বাড়ি তৈরির জন্য ওই অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল। যদিও গত বছর এর কিছু কম বরাদ্দ এসেছিল। এই প্রকল্পে এসেছিল ৯ কোটি ৮৪ লক্ষ ৯০ হাজার, ১,৯৯৪টি বাড়ির জন্য। পুরসভা সূত্রে খবর, প্রথম কিস্তির টাকা ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ১,৭৫২ জন উপভোক্তাকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। আর ২৪২ জন উপভোক্তাকে ৪৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে মেদিনীপুরে দু’হাজারেরও বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে। আরও প্রায় দু’হাজার বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। সম্প্রতি এই খাতে প্রায় ১০ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা এসেছে। এর মধ্যে ৯৫৪ জন উপভোক্তাকে দ্বিতীয় কিস্তিতে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ছাড়া হয়েছে ৯ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। বাকিরা দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কবে পাবেন? পুরপ্রধানের জবাব, ‘‘ধাপে ধাপে টাকা আসছে। এরপর টাকা এলেই বাকিদের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হবে।’’

Advertisement

গত বছর প্রথম কিস্তির ৫০ হাজার টাকা পেয়ে পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ির কাজ শুরু করেছিলেন জাকির খান। সেই কাজ মাঝপথেই থমকে যায়। কারণ, আর টাকা পাচ্ছিলেন না তিনি। নির্মীয়মাণ বাড়ির পাশেই ছোট্ট এক চিলতে জায়গায় এখন রয়েছে তাঁর পরিবার। সম্প্রতি ১ লক্ষ টাকা পেয়েছেন জাকির। শহরের সিপাইবাজারের এই বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘বাড়ির কাজ মাঝপথেই আটকে গিয়েছিল। খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। টাকা পেয়ে কাজটা ফের শুরু করছি।’’

গ্রাম ও শহরে আবাসে বরাদ্দের কিছু ফারাক রয়েছে। শহরে বাড়িপিছু বরাদ্দ ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে উপভোক্তাকে নিজেকে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। গ্রামে অবশ্য উপভোক্তাকে নিজেকে কোনও টাকা দিতে হয় না। গ্রামে বাড়িপিছু বরাদ্দ হয় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। আবাস যোজনায় অনিয়মের অভিযোগ বেশি ওঠে গ্রামেই। অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পশ্চিম মেদিনীপুরেও গত কয়েক বছরে একাধিকবার এসেছে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। কেন্দ্রীয় দল গিয়েছে গ্রামেই।

পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বছর প্রথম দফায় প্রায় এক লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, গ্রাম পঞ্চায়েতপিছু গড়ে ৪৭০ জন উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্র বরাদ্দ ছাড়েনি। তবে আবাস যোজনায় অতি সতর্ক ছিল প্রশাসন। উপভোক্তাদের সভায় ডেকে জানানো হয়েছিল, ৯০ দিন অর্থাৎ, তিন মাসের মধ্যে বাড়ির কাজ শেষ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে পরিদর্শন হবে। সশরীরে গিয়ে দেখা হবে, কাজ কতদূর এগোল। বাড়ির আয়তন হবে ২৫ বর্গ মিটার। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে পেল্লায় বাড়ি করতে পারবেন না উপভোক্তারা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভিত হওয়ার পর দু’মাস পড়ে রইল, তারপর আবার লিনটন পর্যন্ত গাঁথনি উঠল, এ রকম যেন না হয়, সেটাই নিশ্চিত করতে চাওয়া হয়েছিল।’’

তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষ বলেন, ‘‘গ্রামের আবাস যোজনার টাকা ইচ্ছে করেই আটকে রেখেছে কেন্দ্র। গরিব মানুষকে ভোগাতে চাইছে ওরা।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা, ‘‘তৃণমূলের লোকেদের মদতে গ্রামে আবাসে দুর্নীতি হয়েছে। কেন্দ্র হিসেব চেয়েছিল। তা দেওয়া হয়নি বলেই টাকা আটকে আছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement