আরেকটু জল বাড়লেই ডুবে যাবে ট্যাপকল। ঘাটালের গড়প্রতাপ নগরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
চার থেকে চল্লিশ হোক বা আট থেকে আশি, ঘাটালের সব প্রজন্মই মোটামুটি বন্যা পরিস্থিতির সাক্ষী। সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত, ও সেই সঙ্গে বন্যা মোকাবিলায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বিভ্রান্ত এবং ক্ষুব্ধও।
এখন ভরা বর্ষা। শিলাবতী, কংসাবতী-সহ সব নদ-নদীর জল বাড়ছে।সঙ্গে বাড়ছে বানভাসি হওয়ার ভয়। দুর্ভোগোর এই চালচিত্র আর কবে বদলাবে, দশকের পর দশক সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন ঘাটালবাসী। আশ্বাস ছাড়া অবশ্য কিছুই পাননি এই ভুক্তভোগীরা। এ বারও বর্ষা আসতেই ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাসের বক্তব্য, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত নৌকাও মজুত রাখা হয়েছে।”
ঘাটাল জনপদটির আকার ঠিক কড়াইয়ের মতো। তাকে দু’ভাগ করে বয়ে চলেছে শিলাবতী নদী। ঘাটালের উত্তর-দক্ষিণ পূব-পশ্চিম চতুর্দিকেই রয়েছে একাধিক নদ-নদী— কংসাবতী, রূপনারায়ণ, ঝুমি। আর আছে ছোটখাটো অসংখ্য খাল। প্রতি বছর বর্ষায় ভারী বৃষ্টি হলেই ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাদ যায় না ঘাটাল শহর, ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই সত্তরের দশক থেকে চলছে এই জল-যন্ত্রণা। বন্যায় বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘাটাল শহরের পশ্চিম পাড়ের ১২টি ওয়ার্ড। ঘর-বাড়ি, স্কুল, পুর-হাসপাতাল সব জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জলবন্দি হয়ে পড়েন মানুষ।
সংস্কার না হওয়ায় নদী ও খালগুলি ক্রমশ মজে যাচ্ছে। ফলে নদীর জলধারণ ক্ষমতাও কমছে। তাই ভারী বৃষ্টিতে ডুবছে শহর। তার উপর জলাধারের ছাড়া জলে নদী উপচে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। আর তার দোসর ভাঙা বাঁধ। জল বাড়লেই বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় দিন কাটে ঘাটাল শহরের পুব পাড়ের বাসিন্দাদেরও।
শুধু ঘাটাল শহর নয়, ঘাটাল ব্লকের ৮–১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অসংখ্য গ্রামও জলমগ্ন হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। সাপের কামড়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বা জলে তলিয়ে প্রাণহানিও ঘটে। আর থাকে পানীয় জলের হাহাকার। পাম্প ও ট্যাপ জলের তলায় চলে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পুরসভার পাম্প হাউসও। বিদ্যুতের খুঁটির অর্ধেক ডুবে যাওয়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে প্লাবিত এলাকাগুলি। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়। পর্যাপ্ত নৌকাও থাকে না। নষ্ট হয় ফসল। গবাদি পশুরাও সঙ্কটে পড়ে। খাবার জোটে না তাদের। জলেই দাঁড়িয়ে থাকে গরু-ছাগল।
ঘাটালবাসীর আক্ষেপ, এ ভাবে আর কতদিন? বন্যা নিয়ে রাজনৈতিক তরজাতেও ক্ষুব্ধ তাঁরা। ঘাটাল নিশ্চিন্দিপুরের গৃহবধূ রিক্তা সানকি বলেন, “আমরা জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। জরুরি ভিত্তিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হোক।” ঘাটাল শহরের আড়গোড়ার এক প্রবীণ বাসিন্দা মনিকচন্দ্র দাস বলছিলেন,” আমি ছোটবেলায় বন্যা দেখেছি। নাতিকে কোলে নিয়েও সেই একই যন্ত্রণা ভোগ করছি। বলতে পারেন এর সমাধান কবে হবে।” (চলবে)