ফাইল চিত্র।
ইয়াসের দুর্যোগ কাটতে মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। সমুদ্রবাঁধ লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষজন ভেবেছিলেন এ বার দ্রুতগতিতে প্রকল্পের কাজ এগোবে। যে বাঁধের কারণে প্রতি বছর তাঁদের দুর্দশা। ধ্বস্ত সেই সমুদ্রবাঁধ মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পে পাকাপোক্ত হবে।
সেই ভাবনা, আশার পর কেটে গিয়েছে ৬ মাস। তার মধ্যেই ফের একটু ঝাঁকিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে জ়ওয়াদ। কিন্তু যা ভাবা হয়েছিল তার কোথায় কী! ভাঙাচোরা সমুদ্রের পাড়ে আজও পড়ে রয়েছে কংক্রিটের তৈরি স্ল্যাব। প্রশাসনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মেরিন ড্রাইভ সংস্কারের উদ্যোগ ঘিরে একই সঙ্গে ক্ষোভ এবং প্রশ্ন জেগেছে স্থানীয় মানুষের মনে।
২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। প্রতিবছর সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে এই এলাকাতেই সমুদ্রবাঁধ ভাঙছে। আগে যে অংশে মেরিন ড্রাইভ রয়েছে তার সামনে একটি কংক্রিটের স্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হবে বলে প্রশাসনিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়। তার জন্য বিশেষজ্ঞ দল এসে ঘুরেও গিয়েছে। সেই বিশেষজ্ঞ দলের রিপোর্ট অনুযায়ী কংক্রিটের বাঁধের নকশা তৈরি করা হয়েছে। যে নকশা অনুযায়ী তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত স্থায়ীভাবে সমুদ্রবাঁধ তৈরি করা হবে। নিজেদের জীবন-জীবীকার স্বার্থে বাঁধের জন্য জমি দিতেও রাজি বাসিন্দারা। অথচ তার পরেও কোনও অজ্ঞাত কারণে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজটুকুই শুরু হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রেই এই খবর জানা যাচ্ছে। ওই কংক্রিটের বাঁধ তৈরির দায়িত্ব রয়েছে সেচ দফতরে আর মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ।
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানস কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘মন্দারমণি থেকে শৌলা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত যে অংশে মেরিন ড্রাইভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে আগে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা হবে। সেই কাজ শেষ হলে দ্রুত মেরিন ড্রাইভ সংস্কারে হাত দেওয়া হবে।’’ যদিও, সেচ দফতরের কাঁথি মহকুমা একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উত্তম কুমার হাজরা বলেন, ‘‘বাঁধের জন্য অনেক আগেই টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় নকশা হাতে পেলেই কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হবে।’’
যজিও তাজপুর থেকে শঙ্কররপুর পর্যন্ত কংক্রিটের বাঁধ তৈরির প্রয়োজনীয় নকশা কবে হাতে এসে পৌঁছবে এবং চলতি বছরে আদৌ বাঁধ তৈরি শুরু হবে কি না —সে ব্যাপারে অবশ্য সেচ দফতর কিংবা ডিএসডিএ কোনওপক্ষই সদুত্তর দিতে পারেনি।
যা শুনে শঙ্করপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরেও এখনও শুধুই হবে শুনি। কাজ শুরুর নমুনা কোথায়! ফের আবার একটা দুর্যোগ এলে হয়তো আমাদের কথা মনে পড়বে সরকারের। আবার হাঁকডাক শুরু হবে। তবে আমপান, ইয়াসের ছোবল খেয়ে এটুকু এখানকার বাসিন্দার বুঝে গিয়েছেন, আগে চাই কংক্রিটের বাঁধ। তার পর মেরিন ড্রাইভ।’’ (শেষ)