নন্দীগ্রামে কুণাল। নিজস্ব চিত্র
তর্জন গর্জনই সার! দলবদলের যে ‘ঢাক’ পেটানো হয়েছিল গত কয়েকদিনে বিজেপির অন্দরে, শুক্রবার কার্যত তার প্রতিফলন ঘটল না। সদ্য বিজেপি ছাড়া এক প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি জয়দেব দাস-সহ হাতে গোনা কয়েকজন বিজেপি নেতা-কর্মী-সমর্থক এ দিন নন্দীগ্রামে কুণাল ঘোষের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিলেন। বিজেপির আরেক দলত্যাগী নেতা এ দিন দেখাই যায়নি দলবদলের মঞ্চে। বরং এ দিন তাঁর মোবাইল ফোনও বেশিরভাগ সময় বন্ধ পাওয়া গেল। আর দিনের শেষে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল এবং অন্য দলীয় নেতৃত্বকে শুনতে হলে বামেদের ‘চোর’ স্লোগান।
তৃণমূলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল সদ্য পূর্ব মেদিনীপরে দলের দেখভালের বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন। এর পরেই তিনি হলদিয়ায় থাকার জন্য ঘর ভাড়া নিয়েছেন এবং কর্মী-বৈঠক ও সভা করছেন। এ দিন বিকালে নন্দীগ্রামের সাউদখালি মনসা বাজারের ছিল কুণালের সভা। বিজেপির সদ্য দল ছাড়া নন্দীগ্রামের দুই নেতা জয়দেব দাস এবং বটকৃষ্ণ দাসের ওই সভায় তৃণমূলে যোগ দেওযার জোর জল্পনা শোনা দিয়েছিল। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ওই দুই নেতাকেই দল ছাড়ার পরে দাবি করতে শোনা গিয়েছে, এ দিনের সভায় তাঁরা ছাড়াও নন্দীগ্রামে বিজেপির ২০ জন বুথ সভাপতি, চার জন শক্তি প্রমুখ-সহ শতাধিক নেতা-কর্মীর কুণালের সভায় তৃণমূলে যোগ দেবেন। বটকৃষ্ণ ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দলীয় আহ্বায়ক ছিলেন। তাঁকে দলে আনতে পারলে নন্দীগ্রামে বিজেপিকে জোর ধাক্কা দেওয়া যাবে বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর। কিন্তু এদিন শেষ অবধি জয়দেব এবং হাতে গোনা কয়েক জন প্রাক্তন বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগ দিলেও আসেননি বটকৃষ্ণ এবং আকাঙ্খিত অন্য বুথ সভাপতি, শক্তি প্রমুখরা। বটকৃষ্ণের মোবাইল বন্ধ থাকায় এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে জয়দেব বলছেন, ‘‘বটকৃষ্ণের এক আত্মীয় বিয়োগ হওয়ায় তিনি আসতে পারেননি। এ দিন সকালে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী আমার এবং বটকৃষ্ণের বাড়িতে গিয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন তৃণমূলে না যাওয়ার জন্য।’’ একই দাবি তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গেরও। তিনি বলেন, ‘‘বটকৃষ্ণের সদ্য আত্মীয় বিয়োগ হয়েছে। তাই হয়তো আসতে পারেননি। তবে ভবিষ্যতে নন্দীগ্রামে আরও বড় চমক অপেক্ষা করছে।’’
তৃণমূলের তরফে এ দিন ৩৩ জন দলবদলুর নামের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এদিন সভায় তাঁদের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন কুণাল। এ ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান পীযূষ ভূঁইয়া, জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র প্রমুখ। তৃণমূল দলবদলুদের তালিকার কথা দাবি করলেও বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে তৃণমূলের অত্যাচার মানুষ দেখেছে। সেই তৃণমূল বিজেপি ভাঙাতে পারবে না।’’ এ দিন নন্দীগ্রামে দলীয় সভা থেকে ফেরার সময় তৃণমূল নেতৃত্বের গাড়ি যখন টেঙ্গুয়া মোড়ে পৌঁছয়, সেই সময় বাম কর্মীরা তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে ‘চোর চোর’ বলে স্লোগানও দেন। তবে এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ থাকাতে কোনও অপ্রীতিকরকিছু হয়নি।