জয়ের পর সুকুমার হাঁসদা ও দুলাল মুর্মু। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
দু’টাকা কিলো দরে রেশনের চাল আর উন্নয়নের সাইকেল-সেতুতেই আস্থা রাখল জঙ্গলমহল!
ঝাড়গ্রামের হাটে সব্জি বেচে বাড়ি ফেরার পথে ভোটের ফল জেনে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত বিমলা মাহাতো। ঝাড়গ্রামের পুকুরিয়া গ্রামের প্রৌঢ়া বিমলাদেবীর বক্তব্য, “পেটের ভাত জোগাচ্ছে যে সরকার তাকে ফেলে কেন অন্য কাউকে বেছে নেব! সিপিএমকে যদি ৩৪ বছর সইতে পারি, তাহলে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর পাঁচটা বছর দেখব না!”
এ’কথা কেবল বিমলাদেবীর নয়, জঙ্গলমহলের প্রান্তবাসী মানুষজনও একই সুরে জানিয়েছেন, আরও পাঁচটা বছর দেখে তবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। ঝাড়গ্রাম মহকুমার চারটি বিধানসভা এলাকায় ১২ লক্ষ উপভোক্তা রেশনে দু’টাকা কিলো দরে চাল পান। এর মধ্যে ভোটার রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ। ফলে, প্রতি বিধানসভায় চাল প্রাপকদের সংখ্যাটা ফেলনা নয় বলে মনে করছেন বিরোধীরা। সেই সঙ্গে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজসাথীর সাইকেলও ভোটে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন বিরোধীরাও।
জঙ্গলমহলের গুরুত্বপূর্ণ চারটি আসনেই এ বার তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান বেড়েছে। ঝাড়গ্রামে সুকুমার হাঁসদার জয়ের ব্যবধান ১৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫,২২৮। গত বছর সুকুমারবাবুকে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের অন্দরে সুকুমারবাবুকে ঘিরে নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল। এ বার ভোটের আগে সুকুমারবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পোস্টার পড়েছিল ঝাড়গ্রামে। সে সবের প্রভাব অবশ্য ভোটের ফলে পড়েনি।
সুকুমারবাবুর কাছে হেরেছেন জোট প্রার্থী ঝাড়খণ্ড পার্টি নরেনের চুনিবালা হাঁসদা। এ দিন চুনিবালা বলেন, “জনতার রায় মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে, আগামী পাঁচ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার জনগণের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই, তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়।” ঝাড়গ্রামের কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্যের উপলব্ধি, “জঙ্গলমহলের শান্তি ও উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাকে অস্বীকার করায় জনগণ আমাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছেন”
এ বার নয়াগ্রাম আসনে তৃণমূল প্রার্থী দুলাল মুর্মু ও গোপীবল্লভপুর আসনের তৃণমূল প্রার্থী চূড়ামণি মাহাতোও জয়ের ব্যবধান অনেকটাই বেড়েছে। তবে গোপীবল্লভপুর বিধানসভায় এবার তৃণমূলের ভোট কমেছে মাত্র ১ শতাংশ। গতবার নয়াগ্রাম আসনে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ ভোট। এ বার বিজেপি ৩১.৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নয়াগ্রামে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত বার বিনপুরে জয়ী সিপিএমের দিবাকর হাঁসদা। পেয়েছিলেন ৪১ শতাংশ ভোট।
এ বার বিনপুরে তৃণমূল প্রার্থী খগেন্দ্রনাথ হেমব্রম ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। দিবাকরবাবু পেয়েছেন ২৬ শতাংশ ভোট। খগেন্দ্রনাথবাবুর জয়ের ব্যবধান ৪৯,১৮৯। সাঁওতালি নায়িকা বিরবাহা হাঁসদার জামানতই জব্দ হয়ে গিয়েছে।
এ বার জঙ্গলমহলের ভোটে লালগড়ের কংসাবতীর উপর আমকলা সেতু ও নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখার উপর জঙ্গলকন্যা সেতুও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে দাবি শাসকদলের। লালগড়ের সেতু তৈরি হওয়ায় ঝাড়গ্রাম থেকে সহজে লালগড়ে যাওয়া যাচ্ছে। ওড়িশা সীমানাবর্তী নয়াগ্রামের জঙ্গলকন্যা সেতুটি তৈরি হওয়ার ফলে সরাসরি কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর ও মেদিনীপুরের দূরত্ব অনেক কমে গিয়েছে। নয়াগ্রামের পেশায় শিক্ষক বিকাশকুমার মণ্ডল, লালগড়ের চাষি নেপাল পালের বক্তব্য, “স্থানীয় ভোটে দু’টি সেতুরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে।”
ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “ভোটের আগে আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা ও মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন।”