ফেরার অপরাধীর খোঁজ মিলল।
নাবালিকা ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার ঠিক এক মাসের মাথায় গ্রেফতার হল অন্যতম মূল অভিযুক্ত আকাশ মণ্ডল। এই নিয়ে এই গণধর্ষণ কাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়। সব অভিযুক্তই গ্রেফতার হওয়ায় এ বার তদন্ত গতি পাবে বলে মনে করছে পুলিশ।
গত মাসের ২৪ তারিখ কোলাঘাটের পুলশিটা এলাকার দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তার প্রেমিক-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ধর্ষণের ছবি মোবাইলে ভিডিও করে নেয় অভিযুক্তরা। মুখ খুললে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় নির্যাতিতাকে। অপমানে, লজ্জায় ঘটনার দিন রাতেই ওই ছাত্রী বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে মেচেদার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে,পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। ২৯ অগস্ট রাতে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার। মৃত্যুর আগে ঘটনার কথা লিখে জানায় নির্যাতিতা। নির্যাতিতার সেই লিখিত বয়ানের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নামে কোলাঘাট থানার পুলিশ। প্রথমেই অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু মূল অভিযুক্ত ওই ছাত্রীর প্রেমিককে গ্রেফতার না করার অভিযোগে ৩০ অগস্ট সন্ধ্যায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের দেউলিয়া বাজারে ছাত্রীর মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ দেখায় বাম ও বিজেপি। শেষ পযর্ন্ত ছাত্রীর মৃত্যুর দু’দিন পর তার প্রেমিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত আকাশ মণ্ডল ফেরার হয়ে যায়। আকাশের দাদা মানস মণ্ডল কোলাঘাট থানার একজন ভিলেজ পুলিশ। আকাশের বাবা সাধন মণ্ডল শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কর্মী বলে দাবি স্থানীয়দের। এই তথ্যকে সামনে এসে রাজনৈতিক প্রভাবেই পুলিশ অভিযুক্তকে আড়াল করছে এমনটা দাবি করে বিরোধী বাম ও বিজেপি।
যদিও পুলিশের দাবি, পালিয়ে থাকার সময় আকাশ ঘন ঘন জায়গা বদলানোয় তাকে ধরা যাচ্ছিল না। আকাশকে ধরতে তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস পুলিশের চারটি দল তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে তাদের পাঠিয়ে দেন। ওই চারটি তদন্ত দল আকাশের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে আকাশ মহারাষ্ট্রের পুনেতে এক পরিচিতর বাড়িতে রয়েছে। এটা জানার পর তড়িঘড়ি পুলিশের একটি দল তৈরি করা হয়। সেই দলে ছিলেন সাব ইনস্পেক্টর সত্যজিত চানক, ঘটনার তদন্তকারী অফিসার অজয় দাস ও কোলাঘাট থানার দু’জন কনস্টেবল। দলটি গত ২২ সেপ্টেম্বর পুনে পৌঁছে যায়। পুনে সিটি পুলিশের সহায়তায় ২৩ তারিখ পুনে শহরের একটি বাড়ি থেকে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাকে পুনে অ্যাডিশনাল সেশন জজ কোর্টে তোলা হলে বিচারক আকাশের ২৭ সেপ্টেম্বর ট্রানজিট রিমান্ড দেন।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার আকাশ কোলাঘাটে পৌঁছলে শুক্রবার তাকে তমলুক আদালতে তুলে বিচারকের কাছে নিজেদের হেফাজতে চাইবে পুলিশ। এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঘটনার পরই অভিযুক্ত গা ঢাকা দেয়। সার্কল ইনস্পেক্টর স্বরূপ বসাককে নিয়ে আকাশকে ধরার ছক তৈরি করা হয়। আকাশের গ্রেফতারি ঘটনার তদন্তে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ বার তদন্ত গতি পাবে।’’