অবরুদ্ধ: নিকাশি নালার এমনই হাল। নিজস্ব চিত্র
মশা মারতে বর্ষা শুরুর মাস দুয়েক আগেই শহর জুড়ে নানা কর্মসূচি শুরু করেছিল পুরসভা। সেই অভিযানেই খোঁজ মিলেছিল মশার নিত্যনতুন আস্তানার। সেই মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে পুরসভা দাবি করলেও মাঝবর্ষাতেও মশার দাপট এতটুকু কমেনি রামজীবনপুরে।
পুর-বাসিন্দাদের প্রশ্ন, শহরে সাফাই অভিযান চললেও মশার বাড়বাড়ন্ত কমছে কই? পুরসভার চেয়ারম্যান নির্মল চৌধুরীর যুক্তি, “মশাদের একেবারে নির্মূল করা কী সম্ভব? তবে পুরসভার কাজে কোনও খামতি নেই।” পুরসভা সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের এই জনপদে ওয়ার্ডের সংখ্যা ১১। মোট জনসংখ্যা ২৪ হাজার। গত বছর রামজীবনপুরে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন শিশু-সহ ২২জন। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা আরও বেশি। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, জ্বরে আক্রান্তদের শরীরে ডেঙ্গি বা মশাবাহিত কোনও রোগের লক্ষণ মেলেনি।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের নিকাশি নালা-সহ জনবহুল এলাকা থেকে ময়লা তোলার ক্ষেত্রে পুরসভার গাফিলতি রয়েছে। অধিকাংশ মহল্লায় নিয়ম করে বাড়ির নোংরা সংগ্রেহের গাড়িও ঢোকে না। ফলে বাসিন্দারা বাড়ির যাবতীয় নোংরা-আবজর্না ফেলেন পরিত্ত্যক্ত এলাকায়। ওই সব নোংরা বৃষ্টিতে ধুয়ে নালায় গিয়ে জমছে। নালাগুলি আবর্জনায় বুজে যাওয়ার উপক্রম। ফলে বদ্ধ নালার জলে ডিম পাড়ছে মশা।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিকাশি নালা দখল করেই তৈরি হয়েছে অস্থায়ী দোকান-ঘর। ফলে জল-নিকাশি প্রায় বন্ধ। বৃষ্টি হলে ড্রেনের জল উপছে রাস্তায় পড়ে। বেশি বৃষ্টি হলে ড্রেনের জল বাড়িতেও ঢুকে পড়ছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের বক্তব্য, নামেই মশা নিধন কর্মসূচি চলছে। মাঝেমধ্যে কিছু নালায় ব্লিচিং পাউডার এবং মশানাশক তেল স্প্রে করেই দায় সারছে পুরসভা।
শহরের দেপুর, শেরবাজ, বনপুর, রামেশ্বরপুর,আমদান, পুরাতন হাট প্রভৃতি এলাকায় আবার পুকুর-ডোবা গুলিতেও আবজর্নার পাহাড়। পুকুরের জল ঢেকে গিয়েছে কচুরিপানায়। পুরসভার সাফাইকর্মীরা ঠিকমতো কাজ না করায় বাড়ির আশপাশে ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি। সে সব জায়গাই মশার আঁতুড়ঘর। ফাঁড়িগোড়ার এক বাসিন্দা অমিয় পাল বলেন, “ঘটা করে মশা দমন ও সাফাই অভিযানের নানা অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু মশা মারতে পুরসভার ভ্রূক্ষেপ নেই। মশার যে ভাবে দাপট বেড়েছে তাতে মশারি টাঙিয়েও রেহাই মিলছে না।”
রামজীবনপুরের আমদান এলাকার এক বধূ উমা ঘোষের কথায়, “বাড়িতে লিফলেট বলি করে শুধু মানুষকে সচেতন করলে হবে না। পুরসভা নিকাশি নালা, আবর্জনা, ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার না করলে কী লাভ?”
উমাদেবীর অভিযোগ যে অমূলক নয়, তা বোঝা গেল পুরসভারই এক ঠিকাদারের কথায়। ওই ঠিকাদার বলেন, “নবান্নের নির্দেশ আসার পর একবার নালা পরিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু সেই টাকা এখনও পাইনি। টাকা না পেলে কাজ করব কোত্থেকে?”
মশা নিধনের জন্য আলাদা ভাবে টাকা বরাদ্দ করেছিল পুর দফতর। তারপরেও নালা সংস্কার নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে পুর চেয়ারম্যান বলেন, “একবার করে সব নালা পরিষ্কার করা হয়েছে। ফের তা করা হবে।”