ধিক্কার মিছিলে দিলীপ ঘোষ।
কথা মতোই এলেন তিনি। দলের দুই মহিলা কর্মাধ্যক্ষকে গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিবাদে গোপীবল্লভপুরে ধিক্কার মিছিলে যোগও দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তবে শনিবার বিকেলের ওই মিছিলে দিলীপ হাঁটেননি। মিছিলের মাঝামাঝি একটি গাড়িতে বেশ কিছুটা পথ ছিলেন তিনি। মিছিল শুরুর আগে গাড়ি থেকেই মাইক হাতে কিছুক্ষণ বক্তৃতাও করেন। তবে দিলীপের কথা শুনতে না পাওয়ায় দলের একাংশ কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। যাঁদের জন্য এই মিছিল বিডিও হেনস্থায় ধৃত গোপীবল্লভপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি-র সেই দুই কর্মাধ্যক্ষ মধুমিতা দেহুরি ও শেফালি বাশুরি এ দিনই ঝাড়গ্রাম আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।
এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ি বনবাংলোয় দলের তরফে আয়োজিত বনভোজনে যোগ দেন দিলীপ। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, বেগুন ভাজা, উচ্ছে ভাজা, আলুভাজা, বাটা মাছের ঝাল, চাটনি ও পাঁপড়। সেখানে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের বিজেপি-র ক্ষমতাসীন ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৬ জন সদস্যকে নিয়ে বৈঠকও করেন দিলীপ। তবে ওই বৈঠকে পঞ্চায়েত সমিতির ও জেলা পরিষদের কোনও বিজেপি সদস্য ছিলেন না।
বিকেল ৩টা নাগাদ গোপীবল্লভপুরের এসবিআই মোড়ে দলীয় মিছিলে যোগ দেন দিলীপ। গাড়িতে দাঁড়িয়েই মিনিট ১৫ বক্তৃতা করেন দিলীপ। বলেন, ‘‘বিডিও জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে সরকারি উৎসব করছিলেন। তার প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন আমাদের মহিলা জনপ্রতিনিধিরা। অথচ তাঁদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। এক জনের কাছে তিন বছরের শিশুও ছিল। ওই শিশুকেও বিনা কারণে জেল খাটানো হয়েছে। এত অমানবিক এখানকার পুলিশ।’’ দিলীপের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন ছেড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তৃণমূলের গুন্ডারা সন্ত্রাস করছে। রাজ্যে অমানবিক সরকার চলছে।’’ রাজ্য জুড়ে বিজেপি-র উপর তৃণমূল ও পুলিশ মিলিত অত্যাচার চালাচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন দিলীপ। এ দিন নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতার জন্য একযোগে তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেসের কড়া সমালোচনা করেছেন দিলীপ।
ধিক্কার মিছিলে ভালই জমায়েত হয়েছিল। সব মিলিয়ে মিনিট চল্লিশ সেখানে ছিলেন দিলীপ। মিছিল এসবিআই মোড় থেকে হাতিবাড়ি মোড়ে পৌঁছনোর পরে দিলীপ নিজের গাড়িতে গোপীবল্লভপুর ছাড়েন। হাতিবাড়ি মোড়ে হাজির দলীয় কর্মীদের আশা ছিল দিলীপ সেখানে কিছু বলবেন। কিন্তু দিলীপ চলে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়ায়। যদিও জেলা বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের দাবি, ‘‘প্রচুর লোক মিছিলে এসেছিলেন। দিলীপদা এসবিআই মোড়ে বক্তৃতা করলেও দীর্ঘ মিছিল হওয়ায় অনেকে বক্তৃতা শুনতে পারেননি।’’
এ দিকে, এ দিনই ঝাড়গ্রাম আদালতে গোপীবল্লভপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির দুই কর্মাধ্যক্ষ মধুমিতা দেহুরি ও শেফালি বাশুরির জামিন মঞ্জুর হয়। অভিযুক্তদের আইনজীবী তপন সিংহ জানান, এ দিন মামলার কেসডায়েরি তলব (সিডি) করেছিল আদালত। কিন্তু বিডিওকে মারধরের অভিযোগ করা হলেও সিডিতে ইনজুরি রিপোর্ট ছিল না। তাই আদালত দুই অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশে বিকেলে ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পান দুই কর্মাধ্যক্ষ। সন্ধ্যায় দুই কর্মাধ্যক্ষ গোপীবল্লভপুরে পৌঁছলে তাঁদের নিয়ে মিছিল হয়। নিজস্ব চিত্র