(বাঁ দিক থেকে), ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটির সুপার, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও রবিন টুডু। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন পদে মনোনীত হয়েছেন রবিন টুডু। তিনি আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ ও শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদে আছেন। রবিনের নতুন পদপ্রাপ্তিকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। কেউ বলছেন এই পদক্ষেপ আদিবাসী সমীকরণে ভারসাম্যের ইঙ্গিত। কেউ বলছেন ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা।
আদিবাসী সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল এখন দু’ভাগে বিভক্ত। রবিনের নেতৃত্বে সংগঠনের একটি গোষ্ঠী রয়েছে। আবার বাদল কিস্কুর নেতৃত্বে রয়েছে আরও একটি গোষ্ঠী। রবিনের স্ত্রী বিরবাহা সরেন টুডু লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে হেরে যান। লোকসভা ভোটের পরে বিরবাহা সরেন টুডুকে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে দলের জেলা সভাপতি পদ থেকে বিরবাহাকে সরিয়ে তাঁকে জেলা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন করা হয়। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সনও হন বিরবাহা। কিন্তু চলতি বছরে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন পদ থেকে বিরবাহাকে সরিয়ে দিয়ে ওই পদে নিয়ে আসা হয় জয়দীপ হোতাকে। অন্যদিকে গত অগস্টে রবিন বিরোধী পারগানা মহলের প্রাক্তন নেতা শিবশঙ্কর সরেনকে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাইবস অ্যাডভাইসারি কাউন্সিলের সদস্য করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারপার্সনও করা হয় শিবশঙ্করকে। শিবশঙ্করের গুরুত্ববৃদ্ধিতে এবং সেই সঙ্গে বিরবাহাকে বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন রবিন। তারপরই বিভিন্ন জনজাতি ও মূলবাসীদের জাতিসত্ত্বার দাবিদাওয়া সংক্রান্ত সভায় রবিনকে হাজির হতে দেখা যায়। রবিনের নেতৃত্বাধীন পারগানা মহলের স্থানীয় নেতারাও নানা দাবিতে ব্লক ও জেলাস্তরে স্মারকলিপি দিতে থাকেন। এমন আবহে রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সনের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে রবিনের মনোনয়ন ইঙ্গিতবাহী বলেই আড়ালে মানছেন তৃণমূলের একাংশ। জঙ্গলমহলের আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের দুই গোষ্ঠীকেই সরকারের শীর্ষস্তর থেকে পরোক্ষে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
রবিন অবশ্য এসব প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে বলছেন, ‘‘গোষ্ঠী বলে কিছু নেই। মুখ্যমন্ত্রী আমার উপরে বিশ্বাস রেখেছেন। সেই বিশ্বাসকে অটূট রেখে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়াটাই মূল লক্ষ্য। তবে আদিবাসী সংগঠনের কাজ সংগঠনের মত চলবে।’’ শিবশঙ্করও বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যোগ্য ব্যক্তিকেই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব দিয়েছেন। নতুন পদপ্রাপ্তির জন্য রবিনবাবুকে অভিনন্দন। আশাকরি হাসপাতালের সার্বিক উন্নতি হবে।’’
সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি থাকে। স্বাস্থ্য পরিষেবা, ওষুধ ও সরঞ্জাম কেনা, রোগীদের খাবার, পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন বিষয়ে ওই সমিতির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির পূর্বতন চেয়ারপার্সন ছিলেন সুকুমার হাঁসদা। গত বছর অক্টোবরে প্রয়াত হন তিনি। তার পর থেকে সমিতির সভা হয়নি। কারণ চেয়ারপার্সনই ওই সভা ডাকতে পারেন। এতদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিষয়ে ‘নোট শিট’ তৈরি করে জেলা কালেক্টরেটে পাঠাচ্ছিলেন। অনুমোদন পেতে কিছুটা সময়ও লাগছিল। সোমবার ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা ও হাসপাতাল সুপার ইন্দ্রনীল সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেন রবিন। সুপার বলেন, ‘‘নতুন চেয়ারপার্সনকে রোগী কল্যাণ সমিতির সভা ডাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’’