নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
দখল! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক বৈঠকের পরে ‘শব্দ’টির প্রাসঙ্গিকতা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। সরকারি জায়গা দখল করে কোথাও হয়েছে বহুতল। কোথাও হয়েছে সারি সারি দোকান বাড়ি। জেলার পাঁচ পুরসভায় রাজ্য সরকারের নানা দফতরের জমি দখলের ছবি স্পষ্ট। কত জমি দখল হয়েছে, তার হিসাব আদৌ প্রশাসনে রয়েছে কি না সেই প্রশ্নও উঠছে!
কাঁথি
জেলার সদর শহর না হলেও রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ কাঁথি পুরসভা। এই শহরে মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে হরিসভা মন্দির থেকে জুনপুট বাস স্ট্যান্ড মোড় পর্যন্ত সরকারি জমি দখল করে দশকের পর দশক ধরে কয়েকশো দোকান রয়েছে। ওই এলাকাতেই পড়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিকের কার্যালয় এবং পুরপ্রতিনিধি আলেম আলি খানের অফিস। তবে কারও যেন নজরে নেই অবৈধ নির্মাণ। দখলমুক্তির দাবিতে হাই কোর্টের জনস্বার্থে মামলা করেছিলেন অভিজিৎ সাহু নামে শহরের এক বাসিন্দা। সেচ দফতরের জমির উপর রাজা বাজার, ক্যানেল পাড়, করকুলি মৌজায় দীর্ঘদিন ধরে হাজারখানেক পরিবারের বসবাস। এদের মধ্যে কেউ অন্যত্র সরে গিয়েছে। অভিযোগ, স্থান বদলের আগে তারা দখল জমির স্বত্ব টাকার বিনিময়ে আন্যজনকে হস্তান্তর করেছে। শহরের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোড, ক্যালটেক্স , খড়্গপুর বাইপাস এলাকাতেও দখলদারি রয়েছে। পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘সকলকেই সরকারি জমি থেকে সরে যাওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।’’
তমলুক
জেলা সদরের মাঝ দিয়ে গিয়েছে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক। এর দুপাশে পূর্ত দফ্তর, পুরসভার জায়গায় বহু দখলদারি রয়েছে। ২০১৭ সালে নিমতলা থেকে হাসপাতাল মোড়, মানিকতলা পর্যন্ত উচ্ছেদ করে পূর্ত দফ্তর। তবে ফের পূর্ত দফতরের জায়গা বেদখল হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জেলা পূর্ত দফতরের আসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তমলুকের মহকুমা শাসককে একটি রিপোর্ট দেন। তাতে জানা যায়, তমলুক ডাইভার্সন রোডের পাশে পদুমবসান, ডহরপুর, শঙ্করআড়া, শালগেছিয়া, ধারিন্দা মৌজা মিলিয়ে ৩০টি দাগে সরকারি জায়গা বেদখল হয়ে রয়েছে। দখলদারদের নোটিস দেওয়ার পরেও তাঁরা সরে যাননি। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার নালার উপরেই বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। স্টেশন রোডে রেল দফ্তরের জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, দখল মুক্ত করতে রাজ্যের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’
পাঁশকুড়া
শহরের ১,২, ৪, ৫, নম্বর ওয়ার্ডে মেদিনীপুর ক্যানালের দুই দিকের বাঁধের জায়গা দখল হয়েছে। অভিযোগ, শাসক দলের নেতারা টাকার বিনিময়ে সেচ দফতরের জায়গা বিক্রি করেছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পুরনো জাতীয় সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে একাধিক বহুতল। সেখানে কিছুটা পূর্ত দফতরের জায়গা দখল হয়েছে বলে দাবি। অম্রুত জল প্রকল্পের জন্য সম্প্রতি জেলা প্রশাসন পুরসভাকে মেচগ্রাম এলাকায় ৩.০৪ একর জমি দেয়। সেই জমিরও মাটি চুরির অভিযোগ ওঠে। সেখানে সরকারি ১ একর জায়গায় ভেড়ি তৈরি হয়েছে বলে দাবি।
হলদিয়া
শিল্প শহরে মূল সড়ক সংলগ্ন এলাকায় জমি দখলের প্রবণতা বেড়েছে। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশে গিরিশ মোড়, হাজরা মোড়, মঞ্জুশ্রী থেকে দুর্গাচক, সিটি সেন্টার, এইচপি এল লিঙ্ক রোডের ধারে সরকারি জমির বেদখল হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, বেআইনিভাবে পুকুর ভরাট ও জল জমি ভরাটের ঘটনা হামেশাই প্রকাশ্যে আসে। পুরসভার দাবি, কত জমি দখল হয়েছে, তা সমীক্ষা শুরু হয়েছে। রিপোর্টে পেলে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান পুর প্রশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়।
এগরা
জেলার প্রান্তিক এগরা পুরসভা এলাকার আট নম্বর ওয়ার্ডে বেশি জমি দখল হয়ে রয়েছে বলে দাবি। শ্মশানের জন্য চিহ্নিত জায়গায় ঝুপড়ি বাড়ি তৈরি হয়েছে। সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে সরকারি জমি দখল করে তৃণমূলের কার্যালয় বানানোরও অভিযোগ রযেছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ৯ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডে খাস জমি দখল হয়েছে। এগরা ত্রিকোণ পার্কে বিশ্রামাগার দখল করে শাসকদলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দোকান তৈরির অভিযোগ উঠেছিল।
জেলার বিভিন্ন পুর এলাকায় সরকারি জমি দখল প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি অবশ্য বলছেন, ‘‘সরকারি কাজে বাইরে রয়েছি। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে পরে বলব।’’ (চলবে)
(তথ্য: আনন্দ মণ্ডল, দিগন্ত মান্না, গোপাল পাত্র, সৌমেন মণ্ডল)