প্রতীকী চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বেহিসেবি’ খরচে লাগাম পরাতে চাইছেন। খরচ কমিয়ে সাশ্রয় করতে চাইছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খরচের বহরে অবশ্য সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বিশেষত গাড়ির খরচ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ছ’মাসে মেন্টরের গাড়ির বিল হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ, তৃণমূল দলনেতাকেও গাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কর্মাধ্যক্ষদের গাড়ি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ফলে, গাড়ির খাতে জেলা পরিষদের খরচ একধাক্কায় আরও বাড়তে চলেছে। কেন গাড়ির পিছনে এত বিপুল খরচ হচ্ছে? সদুত্তর এড়িয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের সাফাই, ‘‘যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই করা হয়। বাড়তি খরচ না করার সব রকম চেষ্টাই চলে!’’ মেদিনীপুরের পুরপ্রধান ছিলেন প্রণব বসু। পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরনোর পরে তাঁকে জেলা পরিষদের মেন্টর করা হয়। আগে জেলা পরিষদে এমন পদ ছিলই না। সূত্রের খবর, মাস খানেক আগে মেন্টরের গাড়ির বিল জমা পড়ে। যে বিল দেখে না কি চমকে ওঠেন অনেকে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা না কি জানিয়ে দেন, ওই বিলে অনুমোদন দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। যে সময় নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু ছিল, সেই সময়ের বিলও না কি জমা দেওয়া হয়েছিল। অথচ, এই সময়ে অন্যত্র যাতায়াতের জন্য কেউ গাড়ির বিল পেতে পারেন না। পরবর্তী সময়ে বিলের কাটছাঁট করা হয়েছে। ওই সূত্রে খবর, কাটছাঁট করে মেন্টরের গাড়ির ছ’মাসের ভাড়া বাবদ ১,০৩,১৭৩ টাকা দেওয়া হতে পারে।
জেলা পরিষদের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ফেব্রুয়ারি থেকে অগস্ট- এই সাত মাসের বিল জমা পড়েছিল। কিন্তু গত ১১ মার্চ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু ছিল। ফলে, ওই সময়ের গাড়ির বিল মেটানো সম্ভব নয়। বাকি বিল মেটানো হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করাও হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সবদিক না দেখেই বিল মেটালে পরবর্তী সময়ে অডিট রিপোর্টে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’’ প্রণব অবশ্য বলছেন, ‘‘যে বিল দেওয়ার কথা সেই বিলই দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কোনও সমস্যা হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই।’’
একাধিক প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষকে পরে জেলা পরিষদে ‘পুনর্বাসন’ দেওয়া হয়েছে। যেমন কাজি আব্দুল হামিদকে তৃণমূল দলনেতা করা হয়েছে। কাবেরী চট্টোপাধ্যায়কে উপাধ্যক্ষ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি জেলা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, উপাধ্যক্ষ কাবেরীকে সপ্তাহে ২ দিন জেলা পরিষদ থেকে গাড়ি দেওয়া হবে। তৃণমূল দলনেতা হামিদকেও সপ্তাহে ১- ২ দিনের জন্য গাড়ির ভাড়া দেওয়া হবে। কর্মাধ্যক্ষদের গাড়ি ভাড়া বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতদিন কর্মাধ্যক্ষেরা গাড়ির ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা হারে ভাড়া পেতেন। ওই হার বৃদ্ধি করে ৬ টাকা করা হয়েছে। চলতি মাস থেকে বর্ধিত হারে গাড়ি ভাড়া মেলার কথা।
গাড়ির ভাড়া ও তেল বাবদ কত খরচ হয় জেলা পরিষদে? সূত্রের খবর, শুধুমাত্র গাড়ির ভাড়া ও তেল বাবদ মাসে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এই পাঁচ লক্ষের মধ্যে তেল বাবদ খরচই হয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। গাড়ির ভাড়া বাবদ খরচ হয় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। জেলা পরিষদে ১০টি গাড়ি চলে। এর মধ্যে ২টি গাড়ি পুলের। অর্থাৎ জেলা পরিষদের নিজস্ব। বাকি ৮টি গাড়ি ভাড়ায় খাটে। দিনপিছু গুনতে হয় ৫০০ টাকা। এরসঙ্গে তেল খরচ রয়েছে। সূত্রের খবর, এক সময়ে জেলা পরিষদের বৈঠকেও গাড়ির খরচ কমানোর বিষয়টি উঠেছিল। খরচে রাশ টানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য ওই নির্দেশ খাতায়কলমেই থেকে গিয়েছে।