সাপের ছোবলে মৃত্যু হল এক প্রাক্তন শিক্ষকের। মৃতের নাম নির্মল বেরা (৬৬)। শনিবার রাতে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ব্লকের মোহাড়ের মাধবচকের বাসিন্দা নির্মলবাবুর। কংগ্রেস কর্মী হিসেবে পরিচিত নির্মলবাবুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে যান অনেকে। এ দিন রাতে হাসপাতালে যান মৃতের পরিচিত লক্ষ্মী বেরা। মৃত নির্মলবাবুকে দেখে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন বছর আঠান্নর লক্ষ্মীদেবী। রাতে হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। নির্মলবাবুর মৃত্যুর খবর সহ্য করতে না পেরে লক্ষ্মীদেবী হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মাধবচকের কংগ্রেস কার্যালয়ে ছিলেন নির্মলবাবু। সন্ধে সাতটা নাগাদ তিনি শৌচাগারে যান। কিছুক্ষণ পরেই চিৎকার শুরু করেন তিনি। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে গেলে নির্মলবাবু বলেন, তাঁর বাঁ পায়ের পাতায় সাপে ছোবল মেরেছে। রাত আটটা নাগাদ তাঁকে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আধ ঘণ্টা পরে হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে যান সবংয়ের কুন্দনপাল বাটিটাকির বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবী। হাসপাতালে নির্মলবাবুর দেহ দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় লক্ষ্মীদেবীর। মৃত নির্মলবাবুর ছেলে অনিরুদ্ধ বেরা বলেন, “কুন্দনপালের স্কুলে শিক্ষকতার সময়ে লক্ষ্মীদেবীদের বাড়িতে বাবা প্রায় ১৪ বছর ভাড়ায় থাকতেন। সেই থেকেই আমাদের সঙ্গে লক্ষ্মীদেবীর আত্মীয়তার সম্পর্ক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাবাকে সাপে ছোবল মেরেছে শুনে লক্ষ্মীদেবী হাসপাতালে আসেন। কিন্তু উনি বাবার মৃত্যুর খবর সহ্য করতে পারেননি। তাই এমন ঘটনা ঘটল।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মলবাবুকে কেলে খরিশ সাপ ছোবল মেরেছিল। সাপের ছোবলে তাঁর বাঁ পায়ের পাতায় কালো দাগ হয়ে গিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সর্পদষ্ট ব্যক্তির স্নায়ু দ্রুত অকেজো হয়ে যায়। তা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে আক্রান্তকে বাঁচানো সম্ভব বলেই দাবি চিকিৎসকদের। তবে গাড়িতে শুইয়ে আনার পরিবর্তে মোটরবাইকে আক্রান্তকে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা দরকার।
নির্মলবাবুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে দাবি মৃতের ছেলে অনিরুদ্ধবাবুর। তারপরও কেন তাঁর মৃত্যু হল, সেই প্রশ্ন উঠছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা সাপের ছোবল সংক্রান্ত রোগের বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। সাপের ছোবলে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রতিটি চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসা হয়েছিল।’’ তাহলে রোগীর মৃত্যু হল কেন? রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘আক্রান্তকে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে শুনেছি। তাই নিউরোটকসিনের কারণে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।”