পড়ে রয়েছে মৃত অজগর। বেলপাহাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
সবুজের সুরক্ষায় দু’দিন আগেই অঙ্গীকার করেছে অরণ্যশহর। বাস্তুতন্ত্র ও বন্যপ্রাণ বাঁচাতেও শপথ নিয়েছেন ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দারা।
অথচ সেই ঝাড়গ্রাম জেলাতেই জঙ্গল থেকে বেরোনো দু’টি অজগর সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল একাংশ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল বেলপাহাড়ির মধুপুর গ্রাম।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রবি ও সোমবার পর পর দু’দিন দু’টি ইন্ডিয়ান রক পাইথন লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় পাথর ছুড়ে, লাঠিপেটা করে মেরেছেন গ্রামবাসী। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায়নি। ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হলাইচ্চি বলেন, “কারা অজগর মেরেছেন, তথ্য সংগ্রহ করে পদক্ষেপ করা হবে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে বন্যপ্রাণ সচেতনতা কর্মসূচিও করা হবে।’’
বন দফতর জানিয়েছে, বেলপাহাড়ির জঙ্গলে নানা ধরনের অজগর আছে। তবে রক পাইথনের সংখ্যা কমেছে। কয়েক মাস আগে কাঁকড়াঝোরে একটি বাড়ি থেকে অজগর উদ্ধার করে গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছিল বন দফতর। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সুযোগ মেলেনি।
জোড়া অজগরকে পাথর দিয়ে থেঁতলে মারার ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের ভয়, এমন প্রবণতা রোখা না পেলে বন আর বন্যপ্রাণ দুই-ই বিপন্ন হবে। সোমবার বেলপাহাড়ির পরিবেশকর্মী অভীক দত্ত খবর পান, মধুপুরে একটি অজগরকে বেঁধে রাখা হয়েছে। ক্যামেরা কাঁধে চার বন্ধুর সঙ্গে বাইকে রওনা দেন অভীক। ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া মধুপুরের পশ্চিমে রয়েছে জঙ্গল আর পাহাড় ডুংরি। গ্রামে গিয়ে অভীক জানেন, রবিবার একটি অজগর একজনের হাঁস-মুরগির খামারে ঢুকেছিল। সেটিকে পিটিয়ে মারেন কিছু গ্রামবাসী। সোমবার ফের একটি অজগর আরেক গ্রামবাসীর গোয়ালঘরে ঢুকে পড়ে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে গ্রামের রাস্তায় মৃত অজগরটিতে দেখতে পান অভীক।
অভীক বলছিলেন, ‘‘সাপটির মুখের সামনের দিকটা গাছের ছাল দিয়ে বাঁধা ছিল। মাথা থেঁতলানো। রক্তমাখা একটা বড় পাথর পাশে পড়ে ছিল।’’ অভীকই ঘটনাস্থল থেকে ফোন করে খবর দেন বন দফতরে। বনকর্মীরা এসে মৃত সাপটিকে রক পাইথন বলে শনাক্ত করেন। প্রায় ছ’ফুট উচ্চতার দশ কিলো ওজনের স্ত্রী অজগরটিকে ময়নাতদন্তের জন্য বেলপাহাড়ি রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার যে অজগরটিকে মারা হয়েছে, সেটি ছিল পুরুষ। মঙ্গলবার পর্যন্ত তার দেহ মেলেনি। অনুমান, চামড়ার লোভে সেটিকে কেউ লোপাট করে দিয়েছে।