দ্বেষপ্রেমে ভয় কি! ভরসা দিচ্ছে শহর

রাতে ফেরার পথে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। মার খেয়েছেন, শুনেছেন প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দীপায়ন ধর অবশ্য এই হামলা নিয়ে বেশ খানিকটা নির্লিপ্তই

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৪
Share:

শুক্রবার কর্মস্থলে দীপায়ন ধর (বাঁ দিকে), এই ফেসবুক পোস্টের জন্যই প্রাণনাশের হুমকি পান তিনি। নিজস্ব চিত্র

রাতে ফেরার পথে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। মার খেয়েছেন, শুনেছেন প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দীপায়ন ধর অবশ্য এই হামলা নিয়ে বেশ খানিকটা নির্লিপ্তই। তিনি বলছেন, ‘‘আমি ভয় পাচ্ছি না। পালাচ্ছিও না।’’ হামলাকারী যুবকদের উদ্দেশে দীপায়নের কটাক্ষ, ‘‘ওরা না কি ‘দেশপ্রেমী’। ওই ‘দেশপ্রেমীরা’ হালকা করে আদর করে গিয়েছে। তবে আমি মানুষে আস্থা রাখছি। এলাকার লোকজন আমাকে ভালবাসেন। ওঁরা সবাই আমার পাশে রয়েছেন।’’

Advertisement

ফেসবুকে যুদ্ধ-বিরোধী মন্তব্যের জেরেই বুধবার রাতে কর্মস্থল থেকে ফেরার সময় দীপায়ন আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর শহর লাগোয়া আমতলার কাছে ওই ঘটনার পরে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ইঞ্জিনিয়ার। গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশও। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার নির্দেশে শুক্রবার সকালে প্রকল্প-এলাকায় গিয়ে ওই ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে দেখা করেন জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার দেবশ্রী সান্যাল। ঠিক কখন ঘটনা ঘটেছে, ঠিক কোথায় ঘটেছে, ওই যুবকদের চেহারা কেমন, তারা কোন দিক থেকে এসেছিল, কোন দিকে গিয়েছে, সবই জানেন তিনি। জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না।’’

পুলিশের এক সূত্রে খবর, নিগৃহীত ইঞ্জিনিয়ারের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। শুক্রবার একাধিক এলাকায় তল্লাশি-অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। দীপায়ন বলছিলেন, ‘‘ডিএসপি এসেছিলেন। যা যা জানতে চেয়েছেন সবই জানিয়েছি। পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। পুলিশের কাছে মানুষ এটাই আশা করেন।’’

Advertisement

আশা জাগাচ্ছেন দীপায়নের পাড়া-প্রতিবেশীরাও। আদতে কলকাতার বাসিন্দা দীপায়ন কর্মসূত্রে মেদিনীপুরে থাকেন। শুক্রবার সকালে স্থানীয়দের অনেকেই এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। পাশে থাকার কথা বলে গিয়েছেন। স্থানীয় ঠিকাশ্রমিক মহম্মদ মোজাম্মেল বলছিলেন, ‘‘এখানে শান্তিপ্রিয় মানুষের বসবাস। ওঁর ভয়ের কিছু নেই। আমরা সবাই ওঁর পাশে রয়েছি।’’

আমতলার অদূরে চলা একটি প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ ইঞ্জিনিয়ার দীপায়ন। বুধবার রাতে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে আচমকাই তাঁর পথ আটকায় চারটি বাইক। চারটি বাইকে মোট আটজন যুবক ছিল। গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সঙ্গে ছিল শাসানি, ‘খুব মুসলিম দরদি হয়েছিস? খুব কাশ্মীর প্রেম? ভারতমাতা কি জয় বল।’ মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় জওয়ানদের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে ফেসবুকে নিজের মতামত পোস্ট করেছিলেন এই ইঞ্জিনিয়ার। দীপায়নের মতে, পাকিস্তান মানেই সব মানুষ খারাপ, তিনি মনে করেন না। হিংস্রতার বিরুদ্ধে হিংস্রতা, এই সমাধানে তিনি বিশ্বাস করেন না। তারপরেই হামলার মুখে পড়েন এই ইঞ্জিনিয়ার।

স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরভূমি মেদিনীপুর বরাবর শান্তিপ্রিয়। কখনও কোথাও অশান্তি হলেও অচিরেই দাঁড়ি পড়েছে তাতে। মেদিনীপুরের মানুষই শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন। মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলছিলেন, ‘‘মেদিনীপুর শান্তির শহর, সম্প্রীতির শহর। এখানে আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি।’’ আক্রান্ত দীপায়নেরও আর্জি, ‘‘অবহেলায় না থেকে, ভালবাসায় থাকুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement