আগমনী: আসছে দুর্গাপুজো। এগরায় কাশের দোলা। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর আগে বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে শুরু হয় উৎসবের মরসুম। মণ্ডপে মণ্ডপে বাজে মাইক-সাউন্ড সিস্টেম। শব্দের দাপটে অনেক সময় অতিষ্ঠ হন আমজনতা। এ বছর জনসাধারণকে ঘরবন্দি করার পাশাপাশি করোনাভাইরাস যেন শব্দ দানবকেও থামাতে চলছে। কারণ, বহু পুজো উদ্যোক্তায় এখনও পর্যন্ত বুকিং করেননি মাইক ব্যবসায়ীদের।
করোনা আবহে এ বছর বদলে গিয়েছে পুজো আয়োজনের ছবি। সতর্কতা বিধি মেনে বিশ্বকর্মা ও দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন বহু পুজো উদ্যোক্তা। তবে তাতে কমেছে জাঁকজমক। তাই অনেক পরিচিত মণ্ডপেও এখনও মাইক ভাড়া দেওয়ার ডাক পাননি বলে জানাচ্ছেন জেলার মাইক ব্যবসায়ীরা। হাতে গোনা যে কয়েকজন ব্যবসায়ী মণ্ডপে যাওয়ার ডাক পেয়েছেন, তাঁদের বরাদ্দও জুটেছে অনেক কম।
জেলার প্রায় চার হাজার মাইক ব্যবসায়ী এবং কর্মী রয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোয় জাঁকজমক থাকে অনেক বেশি। এছাড়া, জেলা সদর তমলুকে বাস-লরির কাঠামো তৈরি ও মেরামতির গ্যারাজ থাকায় এখানেও বহু বড় বিশ্বকর্মা পুজো হয়। ওই সব মণ্ডপে মাইক বাজানোর জন্য প্রায় তিন মাস আগে থেকে মাইক ব্যবসায়ীদের আগাম বুকিং করা হত। এ বার বিশ্বকর্মা আদৌও বড় করে হবে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অনেকে মাইক বাজানোর পরিকল্পনাও বাতিল করেছে। একই পরিস্থিতি দুর্গা পুজোর ক্ষেত্রেও। পুজো উদ্যোক্তরা মাইক বাজানোর বাজেটে কাটছাঁট করেছেন। ফলে বিপাকে মাইক ব্যবসায়ীরা।
৪০ বছর ধরে মাইক ব্যবসা রয়েছে তমলুকের নিমতৌড়ির উত্তম দাসের। তিনি জানান, ‘‘গতবছর বিশ্বকর্মা পুজোয় হলদিয়া ও তমলুক মিলিয়ে পাঁচটি মণ্ডপে মাইক বাজানোর বুকিং হয়েছিল। দুর্গাপুজোয় তিনটি মণ্ডপে ডাক পেয়েছিলেন। এ বছর দুর্গা পুজোর জন্য একটিও বুকিং হয়নি। শুধু বিশ্বকর্মা পুজোয় একটি মণ্ডপে মাইক বাজানোর বুকিং হয়েছে। তাও অনেক কম বরাতের। উত্তম বলেন, ‘‘গত মার্চ থেকে অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ। মেলা, পুজো, যাত্রা ও বিয়ে-সহ কোথাও মাইক বাজানোর ডাক মেলেনি। আমাদের আয়ও বন্ধ। এর উপরে বিশ্বকর্মা ও দুর্গাপুজোয় মাইক বাজানোর বুকিং প্রায় নেই। এবার পুজোর মরসুমে আয়ের আশা খুবই কম।’’ নন্দকুমারের মাইক ব্যবসায়ী গোপীনাথ মাইতি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগেই ঋণ নিয়ে প্রায় চার লক্ষ টাকার মাইকের যন্ত্রপাতি কিনেছিলাম। তারপর আর মাইকের বুকিং হয়নি। এর ফলে খুবই আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছি।’’
মাইক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘পূর্ব মেদিনীপুর সাউন্ড সিস্টেম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য উত্তম বারিক বলেন, ‘‘জেলায় চার হাজারের বেশি মাইক ব্যবসায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে শুধু কাঁথি মহকুমাতেই এক হাজার ২০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির জেরে অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। পুজোর মরসুমেও ডাক পাচ্ছেন না। আমরা সংগঠন থেকে কিছুটা সাহায্যের কথা ভাবছি। এ বিষয়ে প্রশাসন ও রাজ্য সরকার যাতে ব্যবস্থা নেয়, সে জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছি।’’