রাজ্য সভাপতির সভায় থাকতে চেয়ে বাইরে জমায়েত বিজেপি কর্মীদের। ময়রাকাটায়। নিজস্ব চিত্র
তাল কাটল তিন দিনের ঠাসা কর্মসূচির গোড়াতেই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সভায় ঢুকতে না পেরে বিক্ষোভ দেখালেন দলের কর্মীরা। এমনকি হাতাহাতিতে পর্যন্ত জড়ালেন। বৃহস্পতিবার গড়বেতার ময়রাকাটায় রাজ্য সভাপতির সভায় এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।
বুধবার রাতেই মেদিনীপুরে পৌঁছন দিলীপ। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে প্রাতর্ভ্রমণ করেন। পরে গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোডে। সেখান থেকে ফের মেদিনীপুরে। গড়বেতা, শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রে এ দিন গৃহ-সম্পর্ক অভিযান করেছেন দিলীপ। দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মণ্ডল কমিটির কার্যকর্তাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেন রাজ্য সভাপতি।
বিজেপির গৃহ সম্পর্ক অভিযানের প্রথম পর্যায়ের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। ১০ দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর সই করা চিঠি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন দলের কর্মীরা। শেষ দিনে গড়বেতা বিধানসভা কেন্দ্রে এই অভিযানে শামিল হন দিলীপ। তার আগে গড়বেতার তুলসীচটিতে দলের এক কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন তিনি। সেখান থেকে গড়বেতার ধাদিকায় এসে ৪ জনের বাড়িতে যান দিলীপ। পরে ময়রাকাটায় মণ্ডল কমিটির কার্যকর্তাদের সভায় চলে যান। গোল বাধে সেখানেই।
বিজেপি সূত্রে খবর, এই সভায় প্রবেশাধিকার ছিল গড়বেতা বিধানসভার ৪টি মণ্ডলের কার্যকর্তাদের। সভা শুরুর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় গেট। ঢুকতে না পেরে গেটের বাইরে বাদানুবাদে জড়ান বিজেপি কর্মীরা। বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন বিজেপি কর্মী। তাঁদের থামাতে গিয়ে কার্যত হাতাহাতিতে জড়ান আরও কয়েকজন বিজেপি কর্মী। বিশৃঙ্খলার জেরে সভা শুরুতে দেরি হয়। পরে দিলীপের নির্দেশে গেট খুলে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের সভাকক্ষে ডাকা হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
বিজেপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাসের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের ইন্ধনে পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করানো হয়েছে।’’ তৃণমূলের গড়বেতার ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘লকডাউনের সময় মানুষের পাশে বিজেপি ছিল না। তাই মানুষের কাছে যাওয়ার সাহস পাননি বিজেপির রাজ্য সভাপতিও। দলের কর্মীদের বাড়িতে গিয়েই চিঠি বিলি করেছেন। আর বিশৃঙ্খল দলের সভায় বিশৃঙ্খলা হবে এটাই তো স্বাভাবিক!"
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, রোজই শয়ে শয়ে কর্মী বিজেপি ছেড়ে তাদের দলে আসছেন। বুধবার দাঁতনে এক উপপ্রধান-সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূলে এসেছেন। আজ, শুক্রবারও গড়বেতায় বিজেপির বহু কর্মী তৃণমূলে যোগ দেবেন। এ প্রসঙ্গে মেদিনীপুরে এ দিন দিলীপ বলেন, ‘‘মাথা খারাপ না হলে কেউ আজকাল তৃণমূলে যায় না! বরং আমরাই রোজ যোগদান করাচ্ছি।’’ এরপরই বিজেপির রাজ্য সভাপতির চ্যালেঞ্জ, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি তৃণমূলের লোকেদের, বিজেপির কিছু লোককে ভাঙিয়ে যোগদান করিয়ে দেখাক। বাকিটা বুঝে নেব!’’
তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নিয়েও সরব হয়েছেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রীকে (সর্বদলীয় বৈঠকে) সোজাসুজি বলেছি, আপনি তো পুলিশমন্ত্রী। আপনার কাছে আমার অভিযোগ আছে। একজন কর্মীকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম। আমার নামে এফআইআর হয়েছে। আর আপনার এমএলএ, এমপি সব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চলে যাচ্ছে। একজন মারাও গেলেন। কেউ নিয়ম মানছেন না। কারও নামে কেস হচ্ছে না।’’ আজ, শুক্রবার মেদিনীপুর শহর এবং খড়্গপুর গ্রামীণে কর্মসূচি রয়েছে দিলীপের। কাল, শনিবার কেশিয়াড়ি এবং এগরায় যাবেন তিনি।