কাঁথি শহর। —নিজস্ব চিত্র।
কাঁথি পুর এলাকার রাস্তাঘাট বরাবরই খুব সংকীর্ণ। বহু বছর ধরে পরিকল্পনাহীন ভাবে শহরটি হড়ে ওঠায় রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গার বড্ড অভাব রয়েছে কাঁথি শহরে। বর্তমানেও কাঁথি শহরে যত্রতত্র নির্মানে অনুমোদন দেওয়ার ফলে শহরের মাঝে বিকল্প রাস্তার জায়গা অমিল। এর জেরে কাঁথির রাস্তায় প্রকাণ্ড যানযট নিত্য সমস্যা হয়ে আছে। ইতিমধ্যে পুরসভার গ্রামাঞ্চলের কিছু রাস্তা বাদে অধিকাংশ রাস্তা এখন ঢালাই হয়ে গিয়েছে। শহরের উপর বহু পুরনো নির্মাণ রয়েছে। সেগুলি সরিয়ে রাস্তা চওড়া করার জায়গা নেই। মূল শহরে রাস্তা বাড়ানোর সমস্যার জন্য যানজট অত্যধিক বেড়েছে। টোটোর অত্যাচারে অতিষ্ঠ অবস্থা। এখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। তবে শহরের মধ্যে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনও ব্যবস্থাই নেই আজও।
শহর পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন কাঁথির পুর কর্তৃপক্ষ। আগের তুলনায় পরিচ্ছন্নতার দিকে অনেক নজর বেড়েছে। প্রতি দিন নিয়ম করে পুরসভার সাফাইকর্মীরা খুব সকালে ময়লা পরিষ্কারের জন্য ময়দানে নেমে পড়েন। তবে ময়লা ফেলার জন্য সরকারি ভাবে কোনও জায়গা নেই। বর্তমানে কাঁথি থেকে দিঘাগামী ১১৬বি জাতীয় সড়কের পাশে একটি বেসরকারি সংস্থার অব্যবহৃত জমিতে আবর্জনাগুলো ফেলা হয়। তবে সেগুলিকে নষ্ট করার জন্য ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নেই। এর ফলে খুব তাড়াতাড়ি আবর্জনার পাহাড় হয়ে গিয়েছে ওই জায়গায়। এই বিষয়ে পুর কর্তৃপক্ষের আরও গুরুত্ব সহকারে নজর দেওয়া উচিত।
কাঁথি শহরে পানীয় জলের সরবরাহ হয় দু’টি ওভারহেড ট্যাঙ্কের মাধ্যমে। এ ছাড়া কোথাও কোথাও সাব মার্সিবল বসিয়ে জল ব্যবহার হয়। তবে শহরের ভূগর্ভস্থ জলের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। আগের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এখানে বাড়ি বাড়ি জল প্রকল্প উদ্বোধন করলেও তা এখনও চালু হয়নি। একটা সময় নলকূপ ছিল পানীয় জলের একমাত্র মাধ্যম। তবে এখন পানীয় জলের সরবরাহ অনেকটা ভাল হয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর রক্ষা করার বিষয়ে পরবর্তী পুরবোর্ড আরও সচেতন হলে ভাল হয়।
কাঁথি পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা অনেক পুরনো। শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা সড়কগুলির পাশেই রয়েছে ড্রেন। অপরিসর জায়গা দিয়ে ড্রেনগুলি জল বয়ে নিয়ে ফেলে শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্যানালে। তবে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের জল বহনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ড্রেনগুলি। পরবর্তী পুরবোর্ড কাঁথি শহরের নিকাশি ব্যবস্থার আমূল সংস্কারে উদ্যোগী হলে এলাকার মানুষের জন্য তা উপকারে লাগবে। তবে শহরের নিচু এলাকায় আজও জমা জলের সমস্যা রয়ে গিয়েছে। পুরসভার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫, ৭-এর কিছু অংশে বর্ষার জল জমে ভোগান্তি বাড়ায়।
কাঁথি পুরসভায় আলোর ব্যবস্থা বেশ ভাল। সময়ে সময়ে তা অনেক উন্নত হয়েছে। শহর ছাড়িয়ে পুরসভার গ্রামাঞ্চলের ওয়ার্ডগুলিতে রাস্তা আলোকিত হয়েছে। তবে আলো নষ্ট হয়ে গেলে তা মেরামতিতে সময় লেগে যায়। রাস্তার লাইট রক্ষণাবেক্ষণে আরও একটু নজর দিলে ভাল হয়।
কাঁথি শহরের নিকাশি ব্যবস্থা সব থেকে বড় একটি ইস্যু। ৪০ বছরের পুরনো ব্যবস্থা নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো দরকার। প্রতি বর্ষায় দারুয়া হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা এক হাঁটু জলে ডুবে যায়। শহরের মূল সড়কের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া খোলা মুখের ড্রেন নতুন করে বানানোর উদ্যোগ নিলে ভাল হয়।
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ধিষ্ণু শহরে একটি মেডিক্যাল কলেজ আবশ্যক। এর আগেও একাধিক বার মেডিক্যাল কলেজ গড়ে ওঠার বিষয় শোনা গেলেও তা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি। এক সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও বলেছিলেন কাঁথিতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা। এ ছাড়া একটি মহিলা কলেজও এলাকায় প্রয়োজন।
কাঁথি শহরে গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা বরাবরের। কোনও পরিকল্পনামাফিক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে আসা গাড়ি রাস্তার ওপরেই দাঁড়িয়ে থাকে। এ ছাড়াও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাইক, প্রাইভেট গাড়ি, টোটোর গুঁতোয় রাস্তায় পা পেলা দায় হয়ে যায়।
কাঁথিতে উন্নতমানের স্টেডিয়াম আর অডিটোরিয়াম আজও গড়ে ওঠেনি। শহরের মাঝে একটি ব্রিটিশ আমলের টাউনহল থাকলেও নতুন করে কোনও অডিটোরিয়াম হয়নি আজও। এরই পাশাপাশি এই শহরে থাকা পুরনো কোর্ট, কামান পোতা, নিমকুঠি আছে, পুরানো বাড়ি ভেঙে পড়ে আছে যা পর্তুগিজ আমলে তৈরি হয়েছিল, এই ভবনের সংস্কার হলে ভাল হয়। পুরসভার পূর্বাঞ্চলটার দিকে আর একটু নজর দেওয়া হোক।