—প্রতীকী চিত্র।
হাঁটার জন্য ফুটপাত! না কি ব্যবসার জায়গা? প্রশ্নের সোজা উত্তর সকলেরই জানা। কিন্তু প্রশাসনের তরফে তৈরি ফুটপাত তৈরির পরেই যে কার্যত অস্থায়ী দোকানদারের দখলে চলে যায়, তা-ও অজানা নয় জেলাবাসীর। আর শুধু ফুটপাত দখল নয়, নিকাশি নালার উপরেও অস্থায়ী নির্মাণ জেলার পুরসভায় খুবই চেনা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর পুরসভা এলাকায় ফুটপাত ও নিকাশি দখল মুক্ত ‘হকার জ়োন’ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আগামী এক মাস সময়সীমা রয়েছে। তবে প্রশ্ন, এর পরেও কি দখলমুক্ত হবে ফুটপাত!
তমলুক
তমলুকের নিমতলা মোড় থেকে মানিকতলা পর্যন্ত হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের দুপাশ দখল করে দোকানপাট রয়েছে। ২০২৭ সালে সেখানে উচ্ছেদ করে ফুটপাত ও নিকাশি নালা তৈরি হয়। উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের তমলুক রেগুলেটেড মার্কেট চত্বরে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর ঘোরার পরেই ফের আগের ছবি ফিরে এসেছে। এবার দখল হয়েছে ফুটপাত ও নালা। ফলে পথচারীর ফুটপাত দিয়ে হাঁটা চলাই দায় হয়েছে। পাঁশকুড়া-তমলুক-হলদিয়া রাজ্য সড়কের পাশে জেলখানা মোড়, পুরসভা অফিস, ভীমার বাজার, বড় বাজার এলাকাতেও একই ছবি। পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘আপাতত সকলকেই সতর্ক করা হচ্ছে। আর দোকানদারদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছ।’’
কাঁথি
কাঁথি শহরে আলাদা করে ফুটপাত তেমন নেই। তবে রাস্তার পাশের অংশ বেদখল হয়েছে বহু বছর আগেই। রাজা বাজার থেকে চৌরঙ্গি এবং ক্যানাল পাড় পর্যন্ত রাস্তার দুদিকে রাস্তার পাশের অংশ স্থায়ী দোকানদারই দখল করেছেন। দোকানের সামনে তাঁরা অস্থায়ী ছাউনি করে জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখেন। পুরনো হরিসভার মন্দির থেকে স্কুল বাজার পর্যন্ত শহরের প্রধান রাস্তার পাশে বসেন বহু দোকানদার। আর ক্রেতারা সাইকেল ও মোটর সাইকেল রাখা হয় ফুটপাতেই। ফলে রাস্তা সংকীর্ণ হয়েছে। মেচেদা বাইপাস থেকে খড়্গপুর বাইপাস পর্যন্ত এলাকায় নয়ানজুলির উপরে তৈরি হয়েছে যথেচ্ছ কালভার্ট। এতে নিকাশি বাধা পাচ্ছে। পূর্বাঞ্চলের মনোহরচক, দারুয়া, কপালকুন্ডলার মত জায়গায় সামান্য বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে করকুলি মৌজাতেও নালার উপরে নির্মাণ হয়েছে। পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি বলছেন, ‘‘ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কিছুদিন ধরে অভিযান চলছে।’’
হলদিয়া
শিল্প শহরে একাধিক এলাকায় ফুটপাত এবং নালার উপরে নির্মাণের নজির রয়েছে। হলদিয়ার মোহনা মার্কেট, আপনি মার্কেট, দুর্গাচকের নিউ মার্কেটে স্থায়ী দোকানদারদের একাংশ ফুটপাত দখল করেছেন। ফলে বর্ষাকালে ওই সব বাজারে যাওয়া বাসিন্দাদের ভিজতে হয়। সম্প্রতি হলদিয়া পুরসভার তরফে অভিযান চালিয়ে ফুটপাত খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নালায় নির্মাণের ফলে পুরসভায় নিকাশির সমস্যাও রয়েছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বৈষ্ণবচক বাজারে সামান্য বৃষ্টিতে জল জমে। নিকাশি সমস্যা মেটাতে সম্প্রতি গ্রিন ক্যানেল সংস্কার করা হয়েছে।
পাঁশকুড়া
শহরের পুরাতন এবং স্টেশন বাজার চত্বরে ফুটপাত দখল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ফলে হয় যানজট। অধিকাংশ বাস স্টেশন বাজারের রাস্তা দিয়ে না গিয়ে ঘুরপথে যাতায়াত করে। পুরসভার মধ্য দিয়ে গিয়েছে মেদিনীপুর ক্যানাল। শহরের ৪, ৫, ২ এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডে ওই ক্যানেলের দুই দিকের অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাড়ি। নির্মাণ থাকার কারণে সেচ গফতর খাল সংস্কারও করতে পারেনি। ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের লাগোয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নারান্দা এলাকায় নালা দখল করে একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এতেও নিকাশি বন্ধ হয়ে জল জমে।
এগরা
এগরা পুরসভা এলাকায় কাঁথি ও বেলদাগামী রাজ্য সড়ক এবং এগরা-বাজকুল রাজ্য সড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে। ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বেলদা রাজ্য সড়কের ধারে কয়েকশো অস্থায়ী দোকান বসে। ত্রিকোণ পার্ক থেকে কলেজ পর্যন্ত রাস্তা এমনিতেই সংকীর্ণ। ওই রাস্তার দুপাশেও দখল করে দোকান হয়েছে। অনেকেই নালার উপরেই দোকান বসিয়েছেন। এগরা থানার সামনেও হকারদের দখল রয়েছে। ত্রিকোণ পার্ক থেকে বরদেশ্বরী বাজার পর্যন্ত ফুটপাত, নালা দখল করেই অস্থায়ী দোকান বয়েছ।
(চলবে)
(তথ্য: কেশব মান্না, সৌমেন মণ্ডল, দিগন্ত মান্না, গোপাল পাত্র)