ভিডিয়োয় আনিসুরের হাতে মোবাইল ও সিগারেট। নিজস্ব চিত্র
খুনের মামলার অভিযুক্ত। গত কয়েকমাস ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ‘চিকিৎসাধীন’। কিন্তু তৃণমূল নেতা কুরবান শা খুনের ওই ‘অসুস্থ’ অভিযুক্ত আনিসুর রহমানকে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি) দেখা গিয়েছে কার্যত খোস মেজাজে। তমলুক জেলা হাসপাতালে স্মার্টফোনের ইয়ার ফোন গোঁজা অবস্থায় আনিসুর দিচ্ছে সিগারেটেও সুখটান!
একজন বিচারাধীন বন্দি জেল হেফাজতে থাকাকালীন কীভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারে, সিগারেটেই বা পায় কোথা থেকে এল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিহত কুরবানের পরিবার।
পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি তথা তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি ছিলেন কুরবান। ২০১৯ সালে তাঁকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয় তৎকালীন বিজেপি নেতা আনিসুর। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তমলুক জেলা হাসপাতালে রয়েছে আনিসুর। সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে আনিসুরের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, হাসপাতালের একটি ঘরের বারান্দায় সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে আনিসুর। কানে ইয়ারফোন, হাতে মোবাইল।
বিচারাধীন বন্দির মোবাইল ব্যবহার নিয়ে কুরবানের দাদা আফজল সোমবার ই-মেলে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। আফজল বলেন, ‘‘একজন অভিযুক্ত জেল হেফাজতে থেকে মোবাইল ব্যবহার করলে সাক্ষীদের তো প্রভাবিত করবে। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।’’ এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‘আমরা এই অভিযোগের তদন্ত করছি। উনি যেহেতু জেল হেফাজতের অধীনে হাসপাতালে রয়েছেন, তাই জেল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, মেদিনীপুর সংশোধনাগারে থাকাকালীনও আনিসুরের বিরুদ্ধে মোবাইল ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল। জামিনের কপি হাতে পাওয়ার আগেই হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। কুরবান হত্যা মামালার একজন সাক্ষী-সহ দু'জনকে অপহরণের ঘটনাতেও আনিসুর অনুগামীদের নাম জড়ায়। এত কাণ্ডের পরেও জেল হেফাজতে কি আনিসুরের উপরে যথাযথ নজরদারি চালানো হচ্ছে? সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটি।
অন্য দিকে, আফজল এবং কুরবানের ব্যক্তিগত সহায়ক শেখ ইমরান আলির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক মহিলা। পুলিশ সূত্রে খবর রবিবার পাঁশকুড়ার গড়পুরুষোত্তমপুর এলাকার এক মহিলা আফজল ও ইমরানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পাঁশকুড়ার একজন মহিলা আফজল শা ও ইমরান আলির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
ঘটনাচক্রে আজ, মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে কুরবান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। ইমরান ওই মামলার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। এই বিষয়গুলি দেখে আফজলের অভিযোগ, কুরবান হত্যা মামলায় সাক্ষীরা যাতে আদালতে না যেতে পারেন, তার জন্য পরিকল্পিত ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।