হিসেব-নিকেশ: মঙ্গলবার চাষের জমিতে বিধায়ক। —নিজস্ব চিত্র ।
সময়ে হোমটাস্ক সেরে জমা দিলেই হবে না, ভুল থাকলে খেতে হবে ধমকও!
ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার তরফে সেই ধমক ইতিমধ্যেই খেয়েছেন জঙ্গলমহলের তৃণমূল বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো। দলের বাকি বিধায়কদের মতোই ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতোকে ‘দিদিকে বলো’ জনসংযোগের তালিকা ধরানো হয়েছিল। কোন গ্রামে যেতে হবে, কাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে, কোথায় রাত কাটাতে হবে, সবই ছিল তালিকায়। কিন্তু চূড়ামণি অন্য জায়গায় রাত কাটিয়ে ‘ভুল’ রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, পিকে-র সংস্থার লোকেরা সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করতে এসে সেই ভুল ধরে ফেলেন। আর তারপরই ফোনে ধমক খেতে হয় শাসকদলের এই বিধায়ককে।
ঘটনা মানছেন চূড়ামণি। মঙ্গলবার ফোনে তিনি বলেন, ‘‘এক সংস্থার প্রতিনিধি ফোন করেছিলেন। যা জানতে চেয়েছেন জানিয়েছি।’’ তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘নির্দেশ মেনে শালবনিতে গিয়ে ৫ জনের সঙ্গে দেখা করেছি। আর চণ্ডীপুরে স্থানীয় একজনের বাড়িতে রাত কাটিয়েছি।’’ কেন শালবনিতেই রাতে থাকলেন না? এ বার চূড়ামণির জবাব, ‘‘আমার ওখানে থাকতে কোনও অসুবিধাও ছিল না। থাকলেই হত!’’ সঙ্গে তিনি জুড়ছেন, ‘‘আবার একটা তালিকা আসছে। এ বার যেখানে থাকতে বলা হবে সেখানেই থাকব।’’
জনসংযোগে নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কেরা কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন সে সব ছবি নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর কথা। সূত্রের খবর, চূড়ামণিকে ঝাড়গ্রামের শালবনি গ্রামে গিয়ে গিয়ে ৫ জনের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছিল। গত ১৩ ও ১৬ অগস্ট দু’দফার ওই গ্রামে যান তিনি। তবে শালবনিতে রাত কাটাননি। ১৬ অগস্ট রাত কাটান চণ্ডীপুরে। অথচ পিকে-র অফিসে জানিয়েছিলেন, শালবনিতেই রাত কাটিয়েছেন।
তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, জনসংযোগ খতিয়ে দেখতে সোমবার ঝাড়গ্রামে আসেন পিকে-র সংস্থার প্রতিনিধিরা। শালবনিতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, বিধায়ক গ্রামে এলেও রাতে থাকেননি। এরপরই চূড়ামণির কাছে ফোন আসে।
চূড়ামণি এক সময়ে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন। তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতিও ছিলেন। পরে দুই পদই হারাতে হয় তাঁকে। জনসংযোগে ঘাটতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমকও খেয়েছেন তিনি। ২০১৭-র অক্টোবরে প্রশাসনিক বৈঠকে চূড়ামণিকে তুলোধনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ‘‘আগে তো জমিতে চাষ করতে। এখন করো? জমিতে চাষ করলে তবেই তো মানুষের কথা বুঝতে পারবে।’’
তবে জানা গিয়েছে, পিকে-র সংস্থার প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণ, ঝাড়গ্রামের চার বিধায়কের মধ্যে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে তুলনায় এগিয়ে চূড়ামণিই। তবু ‘ভুল’ রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ধমক খেতে হয়েছে তাঁকে। চূড়ামণির ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল কর্মী বলছিলেন, ‘‘পান থেকে চুন খসলেই বিপদ। ওই সংস্থার নজর যে একেবারে তৃণমূল স্তরে!’’