ফুল-বাগিচায়: নিজের হাতে তৈরি বাগানে প্রণবীর মাইতি। নিজস্ব চিত্র
তাঁর বাগান গোলাপে ভরা। রং-বেরঙের সেই গোলাপ থেকে চোখ ফেরানোই কঠিন।
এমন গোলাপ বাগিচার কল্যাণেই খড়্গপুর গ্রামীণের জকপুরের বাসিন্দা প্রণবীর মাইতি পেলেন ‘ইন্ডিয়ান রোজ ফেডারেশন’-এর সম্মান। সম্প্রতি কলকাতার আলিপুরে ফেডারেশনের অনুষ্ঠানে প্রণবীরবাবুর হাতে স্বর্ণ পদক ও শংসাপত্র তুলে দেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। গোলাপ চাষে দিশা দেখানোর জন্য ফেডারেশনের তরফ থেকে এ বার দু’জনকে সোনার পদক আর শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। প্রণবীরবাবু ছাড়া অন্যজন হলেন পুণের এক ফুলচাষি। এমন সম্মানে উচ্ছ্বসিত প্রণবীরবাবু। বলছেন, “আগেও প্রচুর পুরস্কার পেয়েছি। তবে এটা একদম আলাদা। এই স্বীকৃতি আমাকে আগামী দিনে আরও ভাল কাজ করার ক্ষেত্রে উত্সাহ দেবে।”
জকপুরে প্রায় চার দশক ধরে গোলাপ চাষ করছেন প্রণবীরবাবু। ছোট থেকেই ফুলের প্রতি তাঁর আলাদা একটা টান ছিল। সেই টানেই ফুলচাষ শুরু। গোড়ায় সামান্য জমিতে চাষ শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ বাড়ান। এখন ১৮ একর জমিতে তাঁর একটা আস্ত গোলাপ বাগান।
প্রণবীরবাবু জানালেন, বাগানে প্রায় তিন হাজার রকমের গোলাপ রয়েছে। তিনি নিজে প্রায় একশো রকম গোলাপ তৈরি করেছেন। তাঁর কথায়, “নতুন ধরনের গোলাপ তৈরির আগে কিছু পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এক পরাগের সঙ্গে অন্য পরাগ মেলাতে হয়। পরাগের মিলন ঘটিয়েই নতুন গোলাপ তৈরি করতে হয়। আরও উন্নতমানের গোলাপ চাষের চেষ্টা করছি।” নানা প্রজাতির গোলাপের সুগন্ধও বেশ ভাল।
জকপুরের এই বাগান থেকে গোলাপের চারা যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকী বিদেশেও। প্রণবীরবাবু বলছিলেন, “হরেক প্রজাতির গোলাপের চাহিদা এ রাজ্যের থেকে অন্য রাজ্যেই বেশি। ওই সব রাজ্য থেকে ক্রেতারা এসে গোলাপ চারা নিয়ে যান।’’ ক’দিনের মধ্যেই কাশ্মীর থেকে একজনের আসার কথা। তিনি ৫ হাজার গোলাপের চারা নিয়ে যাবেন। নেপালেও গোলাপের চারা পাঠাবেন প্রণবীরবাবু। জকপুরের এই ফুলচাষি মানছেন, “এই এলাকায় উত্পন্ন গোলাপ চারার চাহিদা বিদেশে ভালই। এখানে নানা ধরণের গোলাপের চাষ হয়। লম্বা ডাঁটিযুক্ত, কম কাঁটার বড় আকারের গোলাপও হয়। ভিন্ রাজ্যেও এর চাহিদা রয়েছে।”
গোলাপ চাষের জন্য কম পরিশ্রম করতে হয় না। চাষের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করতে হয়। নীচু জমি মাটি ফেলে উঁচু করতে হয়, পাইপলাইনে জমিতে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। খড়্গপুর গ্রামীণের এই এলাকায় বেশির ভাগ চাষি দেশীয় গোলাপ চাষ করেন। প্রণবীরবাবুরও দেশি গোলাপের চাষ রয়েছে। পাশাপাশি, হরেক প্রজাতির গোলাপের চাষ করেন তিনি। তাঁর মতে, “ফুলের বর্ণে-গন্ধে চমক থাকলে বাজার পেতে অসুবিধে হয় না।’’