গ্রামবাসীদের অভাব-অভিযোগ শুনছেন স্মৃতি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
বিজেপি ও তার শাখা সংগঠনের পদাধিকারীদের নিয়ে শনিবার দিনভর দফায় দফায় সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন। রবিবার একেবারে গ্রামে গ্রামে ঘুরে জনসংযোগ করলেন মোদী মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মানুষ কতটা উপকৃত সে সম্পর্কে জানতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বললেন মন্ত্রী। মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে গ্রামবাসীরাও তুলে ধরনের তাঁদের বঞ্চনার কথা। আর সে সবের ফাঁকেই কখনও মিষ্টির দোকান, আবার কখনও চায়ের দোকানে ঢুকে চা-চপ এবং ঘুগনির স্বাদ নিলেন মন্ত্রী।
লক্ষ্য , ২০২৪ লোকসভার ভোটকে সামনে রেখে দেশজুড়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। যে সব লোকসভা কেন্দ্রে একবারও জয়ী হতে পারেনি তারা সেই সব আসনের সমীক্ষা করছেন মোদী মন্ত্রিসভার ১৩ জন সদস্য। এ রাজ্যে কাঁথি লোকসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা এবং নারী কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে। রবিবার সাতসকালে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে রামনগর-২ ব্লকের পিছাবনিতে পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজা বন্ধ দেখে থমকে যান স্মৃতি। দুর্ঘটনাপ্রবণ ১১৬ বি জাতীয় সড়কের একেবারে পাশে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানালেন এলাকার মানুষ। এরপর স্মৃতি পৌঁছে যান সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়ায়। সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেখেন কোনওটি ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া, আবার কোনওটি টালির বাড়ি। আবাস যোজনায় সরকারি অনুদান পেয়েছেন কিনা জানতে চাওয়াতে স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে বসলেন এক বৃদ্ধ। পাশে দাঁড়িয়ে একের পর এক অভিযোগ তুললেন কয়েক জন মহিলা। অভিযোগকারী এক মহিলার দাবি, ‘‘ভিক্ষা করে দিন চলে। আবাস যোজনায় প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকারি অনুদান পাচ্ছি না।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়েই এক যুবক অভিযোগ করলেন, ‘‘ইয়াসে বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর একটি ছোট্ট টালির বাড়ি করে মা থাকেন পৃথকভাবে। আবাস যোজনায় প্রাপকের তালিকায় আমার নাম রয়েছে। তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের ইঞ্জিনিয়ার তদন্ত করছেন না। অন্যের মুখে আমার পাকা বাড়ি রয়েছে শুনে আমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’’ আবাস যোজনা নিয়ে ভুরি ভুরি এমন অভিযোগ পেয়ে রীতিমত রাজ্যের শাসক দল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় নারী সুরক্ষা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা বলছে আমরা টাকা পাই না। আমরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। স্থানীয় লোকেরাও বলছেন তৃণমূল যদি না করি তাহলে আমরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পাব না। বাংলার মানুষের অধিকার যাতে হরণ না করা হয় তার জন্য কেন্দ্র নিরন্তর টাকা পাঠাচ্ছে। কিন্তু এখানকার মানুষ কেন টাকা পাচ্ছেন না তার দায় দিদিকেই নিতে হবে।’’ পাশে থাকা দলেরই দক্ষিণ কাঁথির দলেরই বিধায়ক অরূপ দাসকে দেখিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে যত ভুল হয়েছে তার লিস্ট তৈরি করুন। আপনারা রাজ্যে বলুন আর আমরা কেন্দ্রে দাবি তুলছি।’’
এরপর মন্ত্রী উত্তর কাঁথি বিধানসভার আলাদারপুটে যান। সেখানে বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে কথা বলে এলাকাবাসীর অভাব অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা এলাকার হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে বেশ কয়েকজন নতুন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে সেখানেই দোকানে বসে চা আর ঘুগনি খান দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে। এলাকাবাসীদের সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প জুড়ে দেন। তাঁদের সুখ-দুঃখের খোঁজ খবর নেন। পরে কাঁথি শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এক তপসিলি পরিবারের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন স্মৃতি। তবে বিকেলে ঘোষিত সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন স্মৃতি। যদিও আগামী ২৮ ডিসেম্বর ফের কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে আসার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর।a