ভাগ্যের হাতে আলু, আশায় বাঁচেন চাষি

ফলনের অনিশ্চয়তা, দামের ওঠাপড়া, ঝুঁকির বহর সঙ্গী করেও গত মরসুমে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল জেলায়। এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর বীজ বোনা হয়ে গিয়েছে। কেন আলুর প্রতি এত আগ্রহী চাষিরা?

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৩
Share:

কাজ: চলছে আলু বীজ বোনার কাজ। নিজস্ব চিত্র

লাভ হবে না ক্ষতি! — হিসাব কষে চাষ করা মুসকিল। আলু চাষ নিয়ে ফি বছর তাই ‘ফাটকা’ খেলেন তাঁরা— স্বীকার করে নিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের চাষিরা।

Advertisement

ফলনের অনিশ্চয়তা, দামের ওঠাপড়া, ঝুঁকির বহর সঙ্গী করেও গত মরসুমে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল জেলায়। এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর বীজ বোনা হয়ে গিয়েছে। কেন আলুর প্রতি এত আগ্রহী চাষিরা?

প্রায় কুড়ি বছর ধরে আলু চাষ করছেন গড়বেতার বাসিন্দা অভয় কর্মকার‌। তিনি বলেন, “শীতের জমিতে একটা বড় অংশে আলু ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারি না। কথায় আছে না আশায় মরে চাষা!” চাষিরা প্রায় সকলেই বলছেন, আলু চাষে লাভ একেবারেই ফাটকা কারবারের মতো। কোনও বছর ক্ষতি হলেও পরের বছর তা পুষিয়ে নেওয়ার আশা থেকেই যায়। এমনটাই হয়ে আসছে বছরের পর বছর।

Advertisement

তা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের খাদ্য তালিকায় আলু অন্যতম উপাদান। হরেক পদে তার ব্যবহার। ফলে লাভ বা লোকসান যাই হোক— মাঠের আলু পাতে পড়ে প্রায় সব চাষিরই। সারা বছর খাওয়ার চিন্তা থাকে না। এই প্রসঙ্গে ঘাটালের এক চাষি পুলক দিন্দার বক্তব্য, “চাষে লাভ-ক্ষতি তো আছেই। বছরের খাবারের সংস্থান তো হয়ে যায়।”

৭০-৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু ফলে গোটা জেলায়, প্রতি বছর। তবে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাষিরা যতটা জমিতে আলু চাষ করেছেন, তার কিছুটা অংশে অন্য কোনও ফসল চাষ করলে অনেক বেশি লাভ ঘরে তুললে পারতেন। কমত উদ্বেগও। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এখন অবশ্য পশ্চিম মেদিনীপুরে সর্ষে, তিল, বাদাম, ভুট্টার চাষ বাড়ছে। কিন্তু মানুষ আলুর মোহ ছাড়তে পারছেন না চাষিরা।

২০১৭ সালে জেলা জুড়ে আলুর ফলন ভালই হয়েছিল। প্রথম দিকে চাষিরা লাভ পেলেও পরে দাম পৌঁছেছিল তলানিতে। মাঠ থেকে আলু তোলার সময় পেরিয়ে গেলেও মাঠমুখো হননি অনেক চাষি। হিমঘরে আলু রেখে অনেকে সামান্য লাভে কিম্বা খরচটুকু তুলতে পেরেছিলেন। বেশিরভাগ চাষিই আবার ব়ড় লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। এই মরসুমে জলদি জাতের আলু চাষ হয়নি। এমনকী মরসুমের শুরুতে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটেছিল আলু চাষে।

সাধারণত, নভেম্বর মাসের শেষ এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আলু চাষ হয়ে যায়। গত বছরের শেষ ক’দিন আলু বুনেছেন চাষিরা। কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা(তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়ে গিয়েছে। এখনও কোনও কোনও জায়গায় চাষ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।” দফতরের উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রভাত কুমার বসু বললেন, “আবহাওয়ার কারণেই এ বার তো সব চাষ পিছিয়েছে। আলু শীতের ফসল। শীত থাকলে ভালই হবে আলু চাষ।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement