Poor Condition Of Roads

জোড়া প্রকল্পেও শ্রী ফেরেনি রাস্তার

পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে ওই দুই প্রকল্পে রাজ্য জুড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার কাজের সূচনা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ০৭:৩৮
Share:

নন্দকুমারের কন্যা গুরুকুল থেকে বাসুদেবপুর গ্রামে যাওয়ার রাস্তা বেহাল। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

পাকা রাস্তা তৈরির দাবিপূরণ হলে ভোটের বাক্সে তার প্রভাব পড়ে। গত বছর জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে সে কথা জানিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে চালু হয় পথশ্রী, রাস্তাশ্রী প্রকল্প। ওই আওতায় থাকা জেলার রাস্তাগুলির কাজ এগোলেও পূর্ব মেদিনীপুরের বহু গ্রামীণ এলাকার রাস্তায় এখনও বেহাল বলে দাবি বিরোধীদের। আর বর্ষার সময়ে সে সব রাস্তা ডিঙিয়ে প্রচারে যেতে শাসক-বিরোধী সব দলকেই সম্প্রতি অল্প বিস্তর সমস্যায় পড়তে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে ওই দুই প্রকল্পে রাজ্য জুড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার কাজের সূচনা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পে পূর্ব মেদিনীপুরে ৪১৭টি গ্রামীণ রাস্তা পাকা এবং সংস্কারের জন্য ১৩১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। মোট ৩৮৮ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। ভোটের দোরগড়ায়, জেলা পরিষদের দাবি, ওই সব রাস্তাগুলির বেশির ভাগই পাকা করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের বাইরেও জেলার বহু গ্রামীণ রাস্তা বেহাল বলে দাবি। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে বিরোধীদের কাছে সেগুলি হাতিয়ার হয়েছে। যা নিয়ে পাল্টা প্রচারে ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে রাস্তা পাকার কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরতে হচ্ছে জেলার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল নেতাদের। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামীণ রাস্তা পাকা বা সংস্কারের কাজ নিম্নমানের হচ্ছে। সেই কারণেই রাস্তাগুলির শোচনীয় অবস্থা।’’

পূর্ত দফতর ও জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, ২০২০ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’ এবং ২০২১ সালের মে মাসে ‘ইয়াসে’ ঝড়ে জেলার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার রাজ্য সড়কের মধ্যে একটা বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জেলা পরিষদের অধীনে থাকা গ্রামীণ সড়ক (প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মিত) এবং আরআইডিএফের মতো বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে তৈরি রাস্তার মধ্যে ১৫৫২ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গত তিন বছরে ওই সব রাস্তাগুলির একাংশ মেরামতি করা হলেও বেশ কিছু রাস্তা চরম বেহাল। একই ভাবে জেলার বিভিন্ন ব্লকে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে থাকা গ্রামীণ মোরাম ও মাটির রাস্তা পাকা করা হয়নি।

Advertisement

উদাহরণ হিসাবে নন্দকুমার ব্লকের বাসুদেবপুর পঞ্চায়েতের খঞ্চি গ্রামের প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা এখনও মোরাম। বাসিন্দা লক্ষ্মণ শাসমলের কথায়, ‘‘বৃষ্টি হলেই রাস্তা জল-কাদায় ভরে ওঠে।’’ খঞ্চি বাজার থেকে ব্যবত্তারহাট যাওয়ার প্রায় ৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কও বেহাল। রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এছাড়া, শহিদ মাতঙ্গিনী, তমলুক, ময়না, চণ্ডীপুর, ভগবানপুর-১, ২, পটাশপুর-১, ২ এবং খেজুরি- ১, ২ ব্লকের বেশ কিছু এলাকাতেও গ্রামীণ রাস্তা বেহাল।জেলা পরিষদের তথ্য অবশ্য জানাচ্ছে, ২০২২-‘২৩ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ আর্থিক সহায়তায় (স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু স্টেটস ফর ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট) জেলার ২৮টি বেহাল গ্রামীণ সড়ক মেরামতি হয়েছে। চলতি বছরেও কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক মেরামত হয়েছে। আর ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পে ৪১৭টি গ্রামীণ রাস্তা তো মেরামত চলছেই। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ স্বপন দাস বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর সমকালে ঘূর্ণিঝড় আমপান ও ইয়াসে প্রায় সমস্ত গ্রামীণ সড়কের ব্যপক ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু ওই সমস্ত রাস্তা মেরামতির পাশাপাশি, জেলার বহু নতুন গ্রামীণ রাস্তা বানানো হয়েছে। এখন গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজ এবং বিভিন্ন খাতে আর্থিক বরাদ্দ না দেওয়ায় কিছু কাজ বাধা পেয়েছে।’’ (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement